১৩০টি শেল্টার, আশ্রয় নিয়েছে ৪০০০মানুষ, ১০০০সেচ্ছাসেবক ১৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত

শরনখোলায় থেমে থেমে বৃষ্টি, হালকা বাতাস,আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৮:৫৭ পিএম, মঙ্গলবার, ১৯ মে ২০২০ | ৪৯১

শরণখোলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মাঝারি বৃষ্টিপাতসহ হালকা বাতাস বইছে। গত দুইদিন ধরে ভ্যাপসা গরমের পর মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ইফতারির পর পরই মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টের সেচ্ছাসেবকরা আবহওয়ার সতর্কবার্তা প্রচারের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে সহযোগীতা করছে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাইকোন শেল্টারে আনুমানিক ৪০০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সর্বশেষ পরিস্থিতি, ঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, গণমাধ্যমকর্মী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের সাথে শরণখোলায় জরুরী মতবিনিময়সভা করেছেন।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে থানা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ জরুরী সভায় ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন, ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ, কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা, শ্রমিকলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন খোকন, যুবলীগের আহবায়ক ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন প্রমূখ এবিষয়ে আলোচনা করেন।

ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আম্ফান মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের সব ধরেণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। একই সাথে খোলা হয়েছে চারটি ইউনিয়ন পরিষদে আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। করোনা সংক্রমণ এড়াতে ১০৭টি সাইকোন শেল্টারের সাথে আরো ২৩টি বিদ্যালয় ভবন সংযুক্ত করা হয়েছে। এনিয়ে মোট ১৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার প্রায় ২২হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।

ইউএও জানান, ফায়ার সার্ভিস, সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট, আনসা-ভিডিপি সদস্যদের সমন্বয়ে ১০০০ সেচ্ছাসেবক এবং ১৪টি প্রাথমিক চিকিৎসক দল প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের প্রাথমিক খাদ্য সহায়তার জন্য দুই মেট্রিকটন শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার পানি ও করোনা স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

শরণখোলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গভীর সাগরে মাছ ধরারত ফিশিং ট্রলার ও নৌকাসমূহ ইতিমধ্যে উপকূলে ফিরে এসেছে। আম্ফানে জলোচ্ছাসের মাত্রা বেশি হলে উপজেলার ১৩৪২ মাছের ঘের, ২০৬৩টি পুকুর এবং ১৮০টি কাঁকড়া ঘেরের ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আম্ফানের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলা বিভিন্ন এলাকার ৮৫ হেক্টর জমির বোরো, ৪৫হেক্টর ভুট্টা, ৫০হেক্টর মুগ, ১ হেক্টর সূর্যমুখী কর্তন এবং ১০হেক্টর জমির বাঙ্গি, ২হেক্টর তরমুজ, ২৫ হেক্টর জমির মিষ্টি আলু উত্তোলন করা হয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছাসে ১০ হেক্টর সবজি, ২হেক্টর পাট এবং ৫০ হেক্টর জমির আউশ ধানের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা পরিষদের ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, ইফতারির পর থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধী মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। বলেশ্বর নদতীরবর্তী সাউথখালী ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ বগী, দক্ষিণ সাউথখালী, তাফালবাড়ী, চাল রায়েন্দা, রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর, জিলবুনিয়া, রায়েন্দা বাজার পূর্বমাথা, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর, পূর্ব খোন্তাকাটা এবং ধানসাগর ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ও পশ্চিম রাজাপুর এলাকার সাইকোন শেল্টারগুলোতে প্রায় ৪০০০হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত