সংখ্যালঘু পরিবারের কলেজ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ: সঙ্গীদের গাঁঢাকা

মোংলায় সিরিয়াল র‌্যাপিস্ট গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১০:৫৩ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০২০ | ২০২৭

ফাইল ফটো

সংখ্যালঘু পরিবারের কলেজ ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার মামলায় মোংলায় ধুরন্ধর এক যুবককে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মাসুদুর রহমান টুটুল (৩২) নামের ওই যুবককে বুধবার দুপুরে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণ মামলায় শহরের মামার ঘাট থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টুটুল একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতার হওয়া যুবককে একজন সিরিয়াল প্রেমিক র‌্যাপিস্ট বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত যুবক চাঁদপাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ও বর্তমান ইউপি সদস্য মাহফুজা রহমান আপিয়া দম্পত্তির বড় ছেলে। এছাড়া প্রতারনার মাধ্যমে বিভিন্ন নামীদামী টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি গ্রæপ তৈরী করে চাদাঁবাজীসহ অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল টুটুল। সে উপজেলার দক্ষিণ কাইনমারী এলাকায় বসবাস করতো।

এদিকে সিরিয়াল প্রেমিক র‌্যাপিস্ট ধুরন্ধর যুবক টুটুল পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এলাকাবাসী। এ ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও প্রভাবশালী পরিবারের বখাটে ছেলে এক সন্তানের পিতা টুটুলের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেংকারী, র‌্যাব ও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মোংলা সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শহরতলীর নারকেলতলা এলাকার এক সংখ্যালঘু শিার্থীর সাথে গত ফেব্রæয়ারী মাসের প্রথম দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টুটুলের পরিচয় হয়। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১০ ফেব্রæয়ারী শহরের পাওয়ার হাউস রোডের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়ে আসে ধুরন্ধর মাসুদুর রহমান টুটুল। এরপর কৌশলে ওই শিার্থীকে ধর্ষণ করে মোবাইলে তার ভিডিও ধারণ করে সে।

ওই শিার্থীর জবানবন্দী অনুযায়ী পুলিশ আরো জানায়, টুটুলের মোবাইলে ধারণকৃত সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে চলতি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ১৮ বার ধর্ষণ করে। শেষমেষ উপায়ন্তু না পেয়ে ওই শিার্থী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এরপর তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে মোংলা থানা পুলিশের শরনাপন্ন হন। পরে ওই কিশোরী বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে টুটুলকে আসামি করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

টুটুল গ্রেফতার হওয়ার পর পরই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্যাতনের স্বীকার অনেকেই যোগাযোগ শুরু করে সংবাদকর্মীদের কাছে। তারা বর্ননা দেন কয়েকটি গণমাধ্যমের পরিচয় দিয়ে গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষকে জিম্মিকরে চাঁদাবাজী হয়রানীসহ নানা অপকর্মের কাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকেই জানায়, প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার ছিল একটি সংঘবদ্ধ দল। এ গ্রুপটি বিভিন্ন টেলিভিশনের বড় মাপের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সরকারী দপ্তরসহ গ্রামাঞ্চলে নিরিহ মানুষদের জিম্মি করে হয়রানী ও মানুষিক নির্যাতন চালাতো।

মাসুদুর রহমান টুটুল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তার সঙ্গিসাথীরা গা-ঢাকা দেয়। তারা অরো বলেন, এতোদিন যার সাথে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী ও মানুষদের হয়রানী করে আসছিল, সেই সকল সঙ্গীরা একবার দেখতেও যায়নি থানা বা কারাগারে। তবে টুটুলের সঙ্গিদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছে ধর্ষনের স্বীকার অসহায় এ পরিবারটি।

পুলিশের পক্ষ থেকে আরো জানায়, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অনেক অজানা কাহিনী বেড়িয়ে আসছে টুটুলের। তার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনে আরো ৭ থেকে ৮টি মেয়ের সাথে তার মেলামেশার নগ্ন ভিডিও পাওয়া গেছে। সে একজন সিরিয়াল র‌্যাপিস্ট বলেও মন্তব্য করে পুলিশ। টুটুলকে এ ঘটনায় আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে আনা হবে বলেও জানান ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী।

ধর্ষিতার পরিবার জানায়, এক সন্তানের পিতা টুটুল প্রেম করে তার অফিসে এনে আরো অনেক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। সাংবাদিক পরিচয় দিতো টুটুল, জীবন বাঁচানো আর লোক লজ্জার ভয়ে কিছু বলতো না তারা। ভয়ে অভিযোগ দিতেও রাজি ছিল না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত