লবনাক্ত পতিত জমিতে কুল ও লেবু

সমন্বিত চাষে বাদশার সাফল্য

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ০৫:৩৬ পিএম, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৮ | ১৮৬৭

সিডর আইলা বিধ্বস্ত লবনাক্ত পতিত জমি ও মৎস্য ঘেরের বেড়িবাধেঁ ফুল-ফলের চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন কৃষক বাদশা তালুকদার। নিজের জমিতে কুল, ভারতীয় ফুল, বারোমাসি লেবু, আম, মাল্টা চাষ করে নিজে যেমন সাবলম্বী হয়েছেন। তার দেখাদেখি ঐ এলাকাকার অনেকেই এ ধরণের ফুল ও ফলের কাজ শুরু করেছেন।
এমনই একটি ক্ষেত বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় গ্রামের সফল কৃষক বাদশা তালুকদারের ক্ষেত। বাদশা তালুকদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে ১৯৯৬ সালে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করি। বিএ পাশ করার পরে চাকুরীর জন্য ঘুরে বেড়াই বিভিন্ন দপ্তর ও আত্মীয় স্বজনের কাছে। এভাবে চাকুরীর আশায় কেটে যায় জীবনের দশ-বারটি বছর। এক পর্যায়ে হতাশা জেকে বসে আমাকে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি কাজে বিভিন্ন মানুষের সাফল্যের প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হই। পরে স্বচক্ষে দেখতে যশোরের একটি নার্সারি পরিদর্শণ করতে যাই। সেখানে দেখে আরও ভাল লাগে। ঐ নার্সারীর মালিক মোক্তার হোসেনের সাথে কথা বলি। কথা বললে তিনি আমাকে নার্সারী ও কৃষি কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে স্বল্প পরিসরে নিজের এক একর ঘেরের বেড়িবাধেঁ ২০১২ সালে প্রথমে আমি একশ পঞ্চাশটি কুলের চারা (কলব) রোপন করে চাষ শুরু করি। ঐ বছরই আমার গাছে ফল ধরে। এরপর প্রতিবছরই আমার গাছে কুল বৃদ্ধি পেতে থাকে। কুল চাষে শুরু হয় লাভ। স্বচ্ছলতা আসতে শূরু করে আমার সংসারে। পরে আমি ক্ষেতের জমির পরিমান বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে থাকি। এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ একর জমিতে কুল চাষ করছি।


তিনি আরও বলেন, কুলচাষের পাশাপাশি ২০১৬ সালে বারোমাসি সিটলেস লেবু (যে লেবুতে বিচি কম থাকে), আগাম জাতের আম, বারি জাতের মাল্টা ও ভারতীয় গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করি। লেবুর চাষ শুরুর ছয় মাসের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে আমার ক্ষেতে। বর্তমানে দেখছি কুলের থেকে লেবু চাষ আরও বেশি লাভজনক। লেবুর উৎপাদন বারোমাসই হয়। দেড় একর জায়গায় এ লেবু চাষ করছি। লেবু বাগান থেকে দেড় হাজার কলব বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন কৃষি খামারীদের কাছে বিক্রি করেছি। একদিকে লেবু ও অন্যদিকে কলব। দুই খাত থেকেই আসছে অর্থ।


এসব করে নিজের পরিবারের ১২ জন শ্রমিকের পরিবার স্বচ্ছলভাবে চলে। তারপরও হাতে নগদ টাকা থাকে। প্রতিবছরই আমার চাষের জমি বৃদ্ধি করছি। কৃষিতে আমার এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই কুল ও লেবুর চাষ শুরু করছে।

বাদশার প্রতিবেশি মোঃ লাবলু হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাদশার কৃষি ক্ষেতের সফলতা দেখে আমিও চাষ শুরু করি। আমার ক্ষেতেও ভাল লাভ আসতেছে। এছাড়া বাদশার লেবু ও কুল বাগানে এলাকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন এই বাগানে কুল সংগ্রহের খন্ডকালীন কাজ করে, স্বচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি মেটান পরিবারের মৌসুমি ফলের চাহিদাও।


জেলার রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ খলিলুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘পতিত জমিতে লবণ সহিষ্ণু কৃষি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রথমে কৃষক বাদশা তালুকদার কুল চাষ শুরু করেন। পরে আমরা তাকে প্রশিক্ষনের পাশাপাশি সব ধরণের সহায়তা করি। তিনি এখন লাভবান হচ্ছেন। তার দেখাদেখি এই এলাকায় আরও কুড়িটি কুল বাগান তৈরী করা হয়েছে।


বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, লবনাক্ত এলাকায় লবণ সহিষ্ণু কুল ও লেবু চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন জেলার অনেকেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জাতের কুল ও লেবু চাষ ছাড়িয়ে যাবে গোটা উপকুল জুড়ে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত