মঠের উপরিভাগে বেড়ে উঠেছে পরগাছা, ঝুকিতে রয়েছে দেয়াল

অযত্ন-অবহেলায় বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহি অযোধ্য মঠ

মামুন আহম্মেদ

আপডেট : ০৬:১১ পিএম, রোববার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ৩১৫০

অযত্ন আর অবহেলায় রয়েছে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহি অযোধ্য মঠ। মঠের উপরিভাগে বেড়ে ওটা পরগাছা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ঝুকিতে রয়েছে মূল্যবান প্রাচীন এ স্থাপনাটি। বাগেরহাট সদর উজেলার যাত্রাপুর বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বারুইপাড়া ইউনিয়নের ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে কোদলা গ্রামে অবস্থিত ঐত্যিবাহি এ মঠটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সংরতি পুরাকীর্তি হলেও প্রাচীন এ মঠটি দেখতে আশা পর্যটকদের জন্য নেই নূন্যতম সুবিধা। আর এ কারনে স্থাপত্য নান্দনিকতায় এটি দেশের সবচাইতে সুন্দরতম মঠ হলেও এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়।

কবে কার দ্বারা এ মঠ নির্মিত হয়েছিল তার সঠিক কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ঐতিহ্যবাহি এ মঠটি সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নির্মিত। বহুকাল আগে মঠের দণি কার্নিসের নিচে প্রায় অদৃশ্যমান দুই লাইনের একটি ইটে খোদাই করা লিপি অনুযায়ী দেবতার অনুগ্রহ লাভের আশায় কোনো এক ব্রাহ্মণ মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে জনশ্রুতি আছে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য তার সভাসদ গৃহের পন্ডিত অবিলযম্বা সরস্বতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মঠটি নির্মান করেন।


সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঠটির দেয়ালে লাল রংঙের ইটের উপর খোদাই করা অলংকার গুলোতে অযতœ আর অবহেলায় সেদলা পড়েছে। মঠে প্রবেশ দরজার উপরের অংশে পোড়া মাটিতে আকর্ষনীয় অলংকার করা বেশ কয়েকটি ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে ইটের উপর খোদাই করা কারুকাজ গুলো নষ্ট হয়ে নিচে পড়ছে। মঠের উপরে জন্ম নেয়া পরগাছার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেয়াল।


মঠের দ্বায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার সামছুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মঠের উপরে জন্ম নেয়া পরগাছা গুলো পরিস্কার করার জন্য কোন উদ্দ্যোগ নেয়া হয়নি। যে কারনে পরগাছার শিকরে মঠের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো মঠের উপরের অংশে হওয়ার কারনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে তা কেটে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সম্পর্কে খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অবগত ধাকলেও পরগাছা গুলোর ব্যাপারে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সংস্কার কাজ না করার কারনে অলংকার খোদাইকৃত অনেক গুলো ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া রাতে এখানে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। বেড়াতে আসা পর্যটকদের নেই নূন্যতম সুযোগ সুবিধা। কোন হোটেল ও বাথরুম না থাকায় বিশেষ কোন দিন ছাড়া দর্শনার্থীরা খুব কম আসে।

যশোর থেকে অযোধ্য মঠ দেখতে আসা খায়রুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অযোধ্য মঠ সম্পর্কে বইতে অনেক পড়েছে কিন্তু বাস্তবে দেখা হয়নি। তাই সময় পেয়ে ঐতিহ্যবাহি এ মঠটিকে দেখতে আসা। কিন্তু এখানে আসার পর সমস্যায় পড়েগেছি। মঠের আশপাশের কোন খাবার হোটেল বা দোকান না থাকায় মঠটি ভালোভাবে ঘুরে না দেখেই ফিরে যেতে হচ্ছে।


অযোধ্য মঠ দেখতে আসা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা বাসিন্দা মিলি আক্তার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, নিজ জেলাতে ঐতিহ্যবাহি এ মঠটি থাকলে সময় সল্পতার কারনে দেখতে আসা হয়নি। তাই সময় বের করে মঠটি দেখতে আসা। তবে এখানে আসার পর কোন বাথরুম না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছি। এ কারনে অল্প সময় থেকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান গোলাম ফেরদাউস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একজন উপ-প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। তিনি অযোধ্য মঠটি ব্যাপক সংস্কার করার জন্য একটি প্রাককলন তৈরী করেছেন। আশা করি চলতি বছরের মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত