মানতে হবে কঠোর বিধিনিষেধ

দুই মাস পর আবার সুন্দরবনে যাচ্ছে জেলেরা

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১০:১৭ পিএম, মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৭৮২

দুই মাসের অবরোধ শেষে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আবার শুরু হচ্ছে সুন্দরবনে মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন শরণখোলার পাঁচ সহস্্রাধিক জেলে। রাত পোহালেই বন অফিস থেকে পাসপারমিট নিয়ে রওনা হবেন তারা। সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য জলজ প্রাণির প্রজননের জন্য ১জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সব ধরণের বনজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করেছিল বনবিভাগ।

বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এবার মৎস্য আহরণে বেধে দেওয়া কঠোর নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে জেলেদের। জাল পাতার জন্য বাঁশ, কচা, রান্নার জ্বালানি কাঠ, নৌকার ছাউনি সবকিছুই নিয়ে যেতে হবে বাড়ি থেকে। ১৮টি অভয়ারণ্য এলাকা এবং ২৫ ফুটের কম প্রসস্ত খালে কোনো জেলে বা মাছ ধরা নৌকা প্রবেশ করতে পারবে না। এক ইঞ্চির ছোট ফাঁসের কোনো জাল ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ এলাকার বাইরে জেলেরা চরপাটা জাল পেতে ও বড়সি দিয়ে মাছ এবং চাই পেতে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবে। কেউ বিষ দিয়ে মাছ শিকার বা বিধিনিষেধ অমান্য করলে তার বিএলসি বাতিল, বন আইনে জেল-জরিমনা এবং স্থায়ীভাবে তাকে বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।


এদিকে, দুই মাসের এই অবরোধে চরম দুর্দিন গেছে দরিদ্র জেলেদের। মৎস্য আড়তদার এবং ব্যবসায়ীদেরও লোকসান গুণতে হয়েছে লাখ লাখ টাকা। অবরোধ খুলে দেওয়ার পর সুদ এবং ধারদেনা করে নৌকা ও জেলেদের পেছনে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে নতুন করে।


খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে হারুন মোল্লা (৪৮) বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, তার সংসারে সাত জন লোক। সুন্দরবনে একদিন না গেলে তার ঘরে চুলা জ্বলে না। দুই মাসের অবরোধে দিনমজুরী করে কোনোমতে এতোগুলো মানুষের পেট চালিয়েছেন। মহজানের কাছ থেকেও ধার নিয়ে দেনাগ্রস্ত হয়েছেন। একই গ্রামের কবির বয়াতীসহ অনেকেই অবরোধকালিন তাদের দুর্দশার কথা বলেন।

বনসংলগ্র্ন শরণখোলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জালাল মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, তার ৮টি নৌকায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা দাদন দেওয়া। অবরোধের কারণে সেই দাদনের টাকা শোধ করতে পারেনি জেলেরা। আবার নতুন করে নৌকা খুলতে নৌকাপ্রতি ১৫হাজার টাকা করে খরচ হবে। এজন্য তিন লাখ টাকা সুদে আনতে হয়েছে তাকে।


ওই বাজারের মৎস্য আড়তদার মোশারেফ মৃধা, আব্দুর রব আকন এবং সোনাতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, তাদের একেক জনের ২০-২৫টি নৌকায় ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে দাদন দেওয়া রয়েছে। তার পরেও অবরোধের মধ্যে জেলেদের সংসার খরচ দিতে হয়েছে। এই টাকা আদৌ তারা উঠাতে পারবেন কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।


তবে, এই মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, বনবিভাগ যে উদ্দেশ্যে অবরোধ দিয়েছে তা অনেকটাই সফল হয়নি। কারণ, অবরোধের মধ্যেও গোপনে চোরা মৎস্য শিকারিরা বিষ দিয়ে বনের বিভিন্ন খালে মাছ ধরেছে। তারা বিষ দিয়ে মাছের রেণু থেকে শুরু করে জলজ সম্পদের চরম ক্ষতি করছে। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাভবান হয়েছে ওই অপরাধীরাই। এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।


পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আব্দুল মান্নান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, কঠোর বিধিনিষেধ পালনের শর্তে এবার জেলেদের পাসপারমিট দেওয়া হবে। এর আগে ১২ আগস্ট শরণখোলা স্টেশন অফিসে মৎস্য ব্যবসায়ী, আড়তদার ও জেলেদের নিয়ে অবহিতকরণ সভা করে তাদেরকে সকল নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এর পরও কেউ অপরাধে জড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত