এবার ঈদে পর্যটক শূণ্য সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১১:০০ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৫ মে ২০২২ | ৪০৮

ঈদ উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শরণখোলা বলেশ্বর নদের তীর

এবারে ঈদে পর্যটক আসেনি সুন্দরবনে। দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাষুদের কাছে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা ও কচিখালী ছিল পর্যটক শূণ্য। ঈদের এই দীর্ঘ ছুটির মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবার (৫ মে) এই প্রথম একটিমাত্র ট্যুরিষ্ট লঞ্চ ভিড়েছে কটকাতে। যেখানে অন্যান্য বছর ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হতো বনবিভাগকে।


পর্যটক না আসার ব্যাপারে বনবিভাগ বলছে, ঈদের ছুটির পর পরই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। সারাদেশেই ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় কেউ ঝুঁকি নিতে চাননি। যে কারণে এবার এক কথায় পর্যকট শূণ্যই ছিল সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলো। তবে, মোংলার করমজলে কিছু পর্যটকের দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।


এদিকে, সুন্দরবনের দুর্গম কটকা ও কচিখালীতে ট্যুরিষ্টদের সমাগম না হলেও লোকালয় থেকে কাছাকাছি শরণখোলা রেঞ্জ অফিস, নির্মাণাধীন আলীবান্দা ইকোপার্ক, ধানসাগর স্টেশন এলাকাতে প্রচুর দর্শনার্থী দেখা গেছে। তারা ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে আবার লোকালয়ে থেকে অবলোকন করেন বনের অপরূপ সৌন্দর্য। বনবিভাগের সহযোগিতায় দিনে দিনেই ঘুরে এসেছেন তারা।


অপরদিকে, ঈদ উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শরণখোলা বলেশ্বর নদের তীর। উপজেলার বগী থেকে পূর্ব খোন্তাকাটা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদের তীরের ব্লক বসানো নতুন বেড়িবাঁধ আর বলেশ্বর উন্মাতাল ঢেউ বিমোহিত করে সবাইকে। ঈদের ছুটিতে গত তিন দিন ধরে দুপুরের পর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশুদের ঢল নামে সেখানে। ব্লকের ওপর দাড়িয়ে-বসে যে যার মতো উপভোগ করছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য্য। লঞ্চ-ট্রলারে করেও ভ্রমণ করছেন বলেশ্বর নদ।


খুলনার মেহেদী ট্যুরিজমের সিইও শাহেদী ইসলাম রকি মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, এবার ঈদে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটক নেই বললেই চলে। ছুটির মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। তাছাড়া সামনে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। অন্যদিকে, দুই বছর যাবৎ ভারতে যাতায়াত বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বর্ডার খুলে দেওয়ায় পর্যটকরা সেদিকেই ছুটছেন বেশি। যে কারণে সুন্দরবনে পর্যটক কম।


সিইও শাহেদী ইসলাম রকি আরো জানান, খুলনাতে ছোটবড় মিলিয়ে ৩৬টি ট্যুরিষ্ট লঞ্চ রয়েছে। অন্যান্য বছর ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খুলনা থেকে প্রতিদিন দু-চারটি ট্যুরিষ্ট লঞ্চ কটকা, কচিখালী, দুবলায় যেতো। কিন্তু এবার এপর্যন্ত চারটি লঞ্চ বুকিং হয়েছে। বনসাম্পান ২০ জন পর্যটক নিয়ে বর্তমানে কটকায় অবস্থান করছে। এছাড়া, ওয়েব এ ৫২ জন, রেইনবোতে ৩০, ডলফিনে ১৩ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক নিয়ে সকালে (বহস্পতিবার) খুলনা থেকে কটকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এবছর এপর্যন্ত সব নিয়ে ১১৫ জন পর্যটক গেছেন কটকাতে।


পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সুন্দর আলী মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, এবার একেবারেই পর্যটন শূণ্য গেছে কটকা এবং কটিখালী। অন্যান্য বছর ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৪-৫ হাজার পর্যটকের সমাগত হতো। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠতো বনের শুনশান পরিবেশ। চাপ সামলামে হিমশিম খেতো বনরক্ষীরা। কিন্তু এবার পর্যটক নেই বললেই চলে। সকালে (বহস্পতিবার) খুলনা থেকে বনসাম্পান নামে একটি মাত্র ট্যুরিষ্ট লঞ্চ কটকাতে এসে পৌঁছেছে। তাতে সাত জন বিদেশিসহ মোট ২০জনের মতো পর্যকট রয়েছেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের দয়িত্বপ্রাপÍ সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় পর্যটকরা দূরের স্পটগুলোতে তেমন একটা আসেনি। তবে, লোকালয় থেকে কাছাকাছি যেমন করমজল, হারবাড়িয়া, আলীবান্দা এবং বন অফিসগুলো পর্যটকদের ভিড় ছিল। এখনো আসছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত