পিতা ঠকাচ্ছেন দুই সন্তানকে- কৌশলে জমির মালিক হচ্ছেন ইউপি মেম্বার !

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৩:১৭ পিএম, শনিবার, ৭ মে ২০২২ | ৪৪২

মোংলায় ভুমিদস্যু খ্যাত ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামী ইউপি মেম্বর জাহাঙ্গীর মল্লিকের খপ্পরে পড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নরত্তোম বিশ্বাস ও প্রেমানন্দ বিশ্বাস নামক দুই ভাই। মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর জাহাঙ্গীর মল্লিক। স্থানীয় চৌকিদারের মোড়ের নরত্তোম বিশ্বাস ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের প্রায় ছয় একর জমি ইতোমধ্যে হাতছাড়া হয়েছে। এ বিষয়ে মোংলা থানাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে বিচারের আশায় অপেক্ষায় আছেন অসহায় ওই দুই ভাই।

অভিযোগে জানা যায়, মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিক কৌশলে নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে নিজের কব্জায় নেয়। এরপর প্রায় দুই কোটি টাকার জমি বিক্রি করেন । জাহাঙ্গীর মল্লিক নিজের নামেও বেশ কয়েক বিঘা জমি জোর পুর্বক দলিল করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


নরোত্তম বিশ্বাস থানায় দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের ওপর অস্থা না থাকায় তাদের দাদা দর্শন বিশ্বাস ও দাদী পদ্মবতী বিশ্বাস চার নাতি- নরোত্তম বিশ্বাস, প্রেমানন্দ বিশ্বাস, গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যনন্দ বিশ্বাসকে ১৯৮২ ও ৮৮ সালে মালগাজী মৌজার চার একর ১৬ শতক করে মোট ৩২ বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে দেন। এরমধ্যে গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যনন্দ বিশ্বাস তাদের অংশের জমি বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়।

বাকি দুই ভাই নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের জমি রয়ে যায়। এই দুই ভাইকে বিদেশ পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের বাবা। জাহাঙ্গির মল্লিকের কু-পরামর্শে তাদের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস কৌশলে তাদের অংশের আট একর ৩২ শতক জমি পাওয়ার (আমোক্তার নামা) লিখে নেয় বাবা। কিছু দিন পর দেখতে পায় বিদেশ না পাঠিয়ে দুই ভাইয়ের প্রথমে ৪৮ শতক জমি বিক্রি করে দেয় তাদের বাবা। এ খবর জানতে পেরে ২০১৫ সালে বাবাকে দেওয়া জমি বিক্রির পাওয়ার (আমোক্তার নামা) বাতিলে আদলতে মামলা ঠুকে দেয় ভূক্তভোগী ছেলে নরোত্তম বিশ্বাস। এরপর আদলত বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।


আদালতের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর মল্লিকের খপ্পরে পড়ে ছয় একর জমি বিক্রি করে দেয় কৃষ্ণপদ বিশ্বাস। বিক্রি হওয়া প্রায় দুই কোটি টাকার জমির মধ্যে জাহাঙ্গীর একাই কিনেছেন এক কোটি ৫৬ লাখ টাকার জমি।

এ বিষয়ে সালিশ-বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা করতে গেলে ভুক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাসকে জাহাঙ্গীর মেম্বর তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, কোন ব্যাক্তির পাওয়ারনামা জমির ওপর আদলতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেই ব্যক্তি ওই জমি বিক্রি বা অন্যাত্র হস্তান্তর করতে পারবে না। যদি করতে যায় তা হলে আদালত অবমাননার সামিল হবে।

কৃষ্ণপদ বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। জাহাঙ্গীর মেম্বরের কাছে শোনেন বলেই ফোন কেটে দেন।


মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিক দাবি করেন, পাওয়ারনামা নিয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাস জমি বিক্রি করছেন। আমাকে কি কারণে জড়ানো হচ্ছে জানিনা। তবে নরোত্তম বা প্রেমানন্দ বিশ্বাসের কোন জমি আমি ক্রয় করিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত