দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে আছে রামপালের ফয়লাহাট আবাসন প্রকল্পের ৭০ টি কক্ষ

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ১১:১০ পিএম, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২ | ৩৩৩

রামপাল উপজেলার সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্পের নাম ফয়লাহাট আবাসন প্রকল্প। নির্মানের পর এ প্রকল্পে ধাপে ধাপে সাড়ে ৪ শ’ ভুমিহীন পরিবারের ঠাই হয়। অনেকে ঘর পাওয়ার পর দুই একদিন ঘরে থেকেছে। তারপর এক সময় তারা তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে অন্যত্র। আর ফিরে আসেনি। আবার কেউ কেউ নগদ টাকায় অন্যের কাছে ঘর বিক্রি করে ফিরে গেছে পুর্বের ঠিকানায়। এখন ওই আবাসনের প্রায় ৭০ টির মতো ঘর খালি পড়ে আছে।
সরেজমিনে ওই আবাসন প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাউদখালী নদীতে পলি পড়ে ভরাট হলে ওই জমির শ্রেনী পরিবর্তন করেন সরকারের পক্ষে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক। এরপর ২০১০ সালে ফয়লাহাটের পার গোবিন্দপুর মৌজার খাস জমির উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ আবাসন প্রকল্পে ২৮ টি পাকা ব্যারাক নির্মান করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে ৫ টি করে কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিন সেডের রয়েছে আরো ৪০ টি ঘর। সব মিলিয়ে ৬৮ টি ভুমিহীন পরিবারের ঠাই হয় এ আবাসন প্রকল্পে।
শুরু থেকে বসবাস করছে এমন কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বললে তারা জানান, যারা প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছিল তাদের অনেকেই এখন এখানে বসবাস করে না। কেউ কেউ নগদ টাকায় ঘর বিক্রি করে চলে গেছে। আবার অনেকেই দু-একদিন ঘরে থাকার পর তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে। তারা আরো জানান, যারা চলে গেছে তাদের প্রত্যকেরই বাড়ি-ঘর রয়েছে। তারা প্রকৃত পক্ষে ভুমিহীন কিনা সঠিক ভাবে তা যাচাই বাছাই না করে ঘর বরাদ্দ দেয়ার কারনে এ অবস্থা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এক নারী জানান, সম্প্রতি তার বোন ৭০ হাজার টাকায় দুটি ঘর কিনেছেন। জানা গেল তার মতো আরো বেশ কয়েকজন ঘর কিনে বসবাস করছে। সরকারি নিয়মে আবাসনের ঘর বিক্রির কোন নিয়ম নেই। অথচ একের পর এক ঘর বিক্রি চলছে। যাদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা নেই তারা ২০/২৫ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছে। কোন কোন ঘর একাধিকবার টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। ৪০ টি টিন সেডের ঘরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঘর এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় এসব ঘর পড়ে থাকায় মরিচায় খয়ে টিনের চালা, বেড়া, দরজা ও জানালা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী এসব ঘরের কোন কোন ঘরে এখন সাপে বাসা বেধেঁছে।
টিনের ঘরে বসবাস করেন এমন একজন নারী বলেন, ঘর পাওয়ার পর একদিনও ঘরে আসেনি এমন লোকও আছে। ঘরে না থাকার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যারা ঘর পেয়েও আসে না তাদের প্রত্যকেরই বাড়ি -ঘর রয়েছে। সেখানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। দুই একজন মাঝে মাঝে এসে দখল ধরে রাখতে ঘর খুলে ঝাড়ু দিয়ে চলে যান।
নাম প্রকাশ না করে এক সাবেক জনপ্রতিনিধি বলেন, রামপালের সাবেক ইউএনও জিল্লুর রহমানের সময় ফয়লাহাটে বসে ভুমিহীন যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। ওই সময় স্থানীয় সরকার দলীয় কিছু নেতা ভুমিহীনদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঘর বরাদ্দ পেতে সহায়তা করেছিল। যারা সুবিধা দিয়ে ঘর পেয়েছিল তারাই পরবর্তীতে ঘর বিক্রি করে চলে গেছে। আবাসনের একটি ব্যারাকে অন্যের ঘরে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী রবিউলের সাথে থাকেন খাদিজা বেগম নামের এক নারী। জমিজমা বলতে কিছুই নেই। স্বামীর আয়ে চলে তাদের সংসার। নেই মাথা গোজার ঠাঁই। একটি ঘরের জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে আকুতি মিনতি করে বলেন, ভাইজান অনেকে ঘরে থাকে না। সেই সব ঘরের একটি ঘর আমাকে দেন। তার মতো ফাতেমা খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, তারও বসবাসের ঘর নেই। তার এক আত্মীয়ের ঘরের বারান্দায় থাকেন। একটি শিশু সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে কোন মতে আছেন তারা। সেও একটি ঘরের জন্য বার বার আকুতি জানাচ্ছিল। খাদিজা- ফাতেমার মতো আরো অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তারাও চান একটি ঘর।
এ ব্যাপারে রামপাল উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন বলেন, যে সব কক্ষ শুণ্য পড়ে আছে সেই সব কক্ষে প্রকৃত ভুমিহীনদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। যাদের ঘর নেই তারা আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত