হারিয়ে গেছে বাগেরহাটের জয়গাছি খাল: দখল করে চলছে মাছ চাষ

মামুন আহমেদ

আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ | ৬৬০

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি খালটি এখন মৃতপ্রায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারেরা খালটি দখল করে মাছ চাষ করার ফলে অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে এক সময়ের প্রবাহমান এ খালটি। স্থানীয়দের অভিযোগ খালটি প্রভাবশালীদের দখলে থাকার কারনে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন তারা। জলাবদ্ধতা নিরসনে মৃত প্রায় খালটি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন দখলদারও। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।


সরেজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জয়গাছি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিন দখল করে মাছ চাষ করার ফলে এক সময়ের প্রবাহমান খালটি এখন মৃত প্রায়। খালটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রভাবশালীদের মৎস্য ঘেরের পাশ দিয়ে খাল বয়ে যাওয়ায় যে যার মত করে খালটি দখল করে রেখেছে। বর্তমানে কোনটি খাল ও কোনটি মৎস্য ঘের তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

জয়গাছি গ্রামের বাসিন্দা সালাম শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমাদের এ খালটির সাথে পার্শ্ববর্তি ভৈরব নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই খালটি দিয়ে পানি নামতো এক সময়। এছাড়া খালটির জোয়ারের সময়ের পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কৃষি কাজ করতো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর দখল করে মাছ চাষ করার ফলে খালটি এখন মৃত প্রায়। বর্মমানে পরিস্থিতি এমন যে, কোনটা খাল আর কোনটা মাছের ঘের সেটাই খুজে পাওয়া যায়না।

একই গ্রামের অপর বাসিন্দা এনামুল মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, এলাকার জলাবদ্ধা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি দখলে থাকার কারনে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জয়গাছি মাঠ সংলগ্ন প্রায় এক’শ পরিবারের ঘর-বাড়ী সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যারা খাল দখল করে মাছ চাষ করছে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে তারাও। কারা দখল করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বেমরতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক এর নেতৃত্বে খালটি দখল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন দখলের ফলে পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, খালটি দখলমুক্ত হওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেমরতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, জয়গাছি খালটি আমি বা আমার নেতৃত্বে দখল করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। খালটির এক পাশ দিয়ে পুরাতন একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কোন কালভার্ট বা পানি সরার কোন ব্যবস্থা নাই। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে যে যার মত করে দখল করার কারনে আমি ইচ্ছা না থাকলেও দখলদার সেজে গেছি।

এলাকাবাসি জলাবদ্ধতায় আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও তো জলাবদ্ধার শিকার হচ্ছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার বাড়ী-ঘর সব পানিতে তলিয় যাচ্ছে। আমি নিজেও প্রশাসনের কাছে খালটি দখলমুক্ত করার দাবী জানাচ্ছি।


বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, জয়গাছি খাল দখলের বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। দ্রুতই খালটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, জয়গাছি খালটি দখল করে মাছ চাষ ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধার বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত