মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল সংলগ্ন ৮৩ টি খাল খনন শুরু

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৩:২৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮ | ১৫২৬

মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল সংলগ্ন ৮৩টি খাল ও নদী খনন কার্যক্রম অবশেষে শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি পুরণ হওয়ায় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই খালগুলি পরিপূর্ণভাবে সচল করা হলে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ রুটটি নাব্যতা ফিরে পাবে এবং রক্ষা পাবে এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন।

জানা গেছে, রামপাল মোংলার প্রভাবশালী চিংড়ি চাষীরা পরিবেশের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করে আসছিল। কোন ভাবেই তাদের আটকানো যেতনা। প্রশাসনের নজরদারী উপেক্ষা করে এখনও অনেক খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে। এখনও পর্যন্ত শত শত খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ অব্যাহত থাকায় এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন এদের ক্ষমতার উৎস কোথায় ? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, রামপাল উপজেলা ও মোংলা উপজেলা প্রশাসন দখলবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করার পরও প্রভাবশালীরা তা মানছে না।


নৌ চ্যানেলটির নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১৮ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব খালের খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের “মুন্সির খাল” খননের মধ্যে দিয়ে এ কাজ শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ জহুরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ১৪ মে এ খনন কাজের কথা থাকলেও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে তা সম্ভব হয়নি। পাঁচ’শ ৫০ কোটি টাকার চুক্তি মূল্যে এ খনন কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান “জয় গ্রুপ”। তাদের সার্বক্ষনিক তদারকিতে থাকবেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। সংস্থাটির “ডাইরেক্টর ওয়েলফেয়ার” শাখা এর দেখভাল করবেন বলেও জানান জহুরুল ইসলাম।

বিআইডাব্লিউটিএ এবং রামপাল উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের দূরত্ব কমাতে ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ রুট চালু হয়। পলি পড়ে ২২ কিলোমিটার বন্ধ হওয়ার কারনে ২০১০ সালের পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই চ্যানেলটি। পরে ২০১৪ সালে ২’শ ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে পলি অপসারন এবং দখল করে রাখা সংযুক্ত কয়েক’শ সরকারী খাল খনন কাজ শুরু করে নৌ পথটি পুনরায় চালু করা হয়।


তবে চ্যানেলের পাশে ৮৩ টি খাল স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে চিংড়ি চাষ করায় নৌ চ্যানেলটির পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হত। এতে করে আবার পলি পড়ে চ্যানেলটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। একপর্যায়ে আশংকা করা হচ্ছিল এসব খাল খনন না করলে দুই থেকে তিন বছর পর চ্যানেলটি কার্যকারিতা হারাবে।


মোংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেল খননের কাজে নিয়োজিত বিআইডাব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) মোঃ আঃ মতিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চ্যানেল সংযুক্ত খালগুলো দখলে থাকায় নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। এ কারনে আবার পলির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। খালগুলো পুরোপুরি খনন হলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং নৌ চ্যানেল সচল থাকবে বলে জানান তিনি।

রামপাল উপজেলার নির্বাহী অফিসার তুষার কুমার পাল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মোংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেল খননের পরও প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়ায় এ চ্যানেল সংযুক্ত ৮৩ টি খাল দখল করে রাখায়। এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা এসব খাল আটকে চিংড়ি ঘের করতেন। এতে করে নৌ চ্যানেলের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। প্রভাবশালীরা তারপরও খালগুলো দখলে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন প্রভাবশালীরা যত বড়ই শক্তিশালী হোকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এরপরে ত্রান ও দূর্যোগ অধিদপ্তর থেকে রামপাল উপজেলায় খাল কাটার জন্য ২’শ ৪০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হলে এ চ্যানেলের সংযুক্ত খালের ১৫’শ ৮ টি অবৈধ বাঁধ অপসারন করা হয়েছিল। এরপরও প্রভাবশালীরা খাল দখল করে রাখেন। তাদের কবল থেকে এ খাল উদ্ধার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সার্ভের দায়িত্ব দেয়া হলে তারা খাল খননের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠান। পরে প্রস্তাবনা যাচাই করে খাল খননের জন্য ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারী জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি একনেক সভায় সাত’শ ছয় কেটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় খাল খনন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোঃ আবুল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, প্রথম পর্যায়ে পাঁচ’শ ৫০ কোটি টাকা চুক্তিমূল্য নৌ বাহিনীর তত্বাবধায়নে এ কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান “জয় গ্রুপ” কে দেয়া হয়। তারা তিন বছরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করবে। তিনি আরো বলেন, প্রথমে মুন্সির খাল খনন করা হচ্ছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে খালগুলি খনন করবেন তারা। মেসার্স জয় গ্রুপের পরিচালক মফিজুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খালগুলি যাতে কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে খনন করা যায় সে জন্য তিনি প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।


নদী গবেষক মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ নৌ রুটটির নাব্যতা রক্ষায় যা করনীয় সেটি হলো, চ্যানেল সংলগ্ন ৮৩ টি নদী খাল দ্রুত খনন করা, এ চ্যানেলের অন্যতম শাখা নদী দাউখালী উপর নির্মিত স্লুইস গেট ও বক্স কালভার্টসহ সকল বাঁধা অপসারণ করা, সংরক্ষন ড্রেজিং অব্যহত রাখা, জলাভূমি উন্মুক্ত করন ও টাইডাল বেশিন র্নির্মান করে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের আরও নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।


এদিকে মোংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেল রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এম,এ সবুর রানা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চ্যানেল সংযুক্ত ৮৩ টি খাল খনন করলেই হবেনা, এর পাশে আরো বিল ও জলাভূমি আছে সেগুলোও উন্মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, খাল খননের জন্য যে টাকা বরাদ্ধ হয়েছে তা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত