সরকার নির্ধারিত মূল্য হাজার চল্লিশ-কৃষক পাচ্ছে মন প্রতি ছয়শ’

চিতলমারীতে ধান এখন কৃষকের গলার কাঁটা ॥ বিক্রি করেও মিলছে না টাকা

এস এস সাগর

আপডেট : ০৪:৪২ পিএম, শুক্রবার, ২৫ মে ২০১৮ | ১৪০৪

বাগেরহাটের চিতলমারীতে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে খুশি এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষি বিভাগ। আরও খুশি সরকারি ভাবে ধানের মূল্য নির্ধারণ করায়। কিন্তু এবার সরকার নির্ধারিত এক হাজার চল্লিশ টাকা হলেও এখানে প্রতিমন ধানে কৃষক পাচ্ছেন ৬০০ টাকা। তারপরও ধান বিক্রি করে সময় মত মিলছে না টাকা। তাই একদিকে নায্যমূল্য, অপরদিকে বিক্রিত পণ্যের টাকা সময়মত না পাওয়ায় ধান এখন এ এলাকার কৃষকদের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে বসে এমনটাই বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানালেন শ্যামপাড়া গ্রামের কৃষক কিশোর মন্ডল, সুরশাইল গ্রামের মুন্না শেখ ও কুরমনি গ্রামের দেবজ্যোতি মন্ডল।


তারা আরও জানান, চলতি বোরো মৌসুমের ধান কৃষকের গোলা ভরছে না। বহু কষ্টে উৎপাদিত ধান চলে যাচ্ছে ট্রাক ভরে মহাজনের গুদামে। তাই এ উপজেলার চাষিদের মুখে হাসি নেই। এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও সরকারী ভাবে নির্ধারিত মূল্য তারা পাচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনরা এ অঞ্চলের কৃষকদের জিম্মি করে ফেলেছে। তাই তারা বাধ্য হয়ে কঠিন পরিশ্রমে উৎপাদিত ধান গোলায় না ভরে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর উপজেলায় মোট ব্লকের সংখ্যা ২১ টি। এরমধ্যে বড়বাড়িয়া ব্লকে এক হাজার ৯০১ একর, হাড়িয়ারঘোপ ৯২৬ একর, মাছুয়ারকু এক হাজার ৮৭৭ একর, কলাতলা এক হাজার ৩৫৮ একর, রহমতপুর এক হাজার ২৯৬ একর, শৈলদাহ এক হাজার ৩০৯ একর, হিজলা এক হাজার ৯৯ একর, কুড়ালতলা এক হাজার ৩৩৩ একর, শান্তিপুর এক হাজার ১৯৭ একর, শিবপুর ৬১৭ একর, বড়বাক ৬১৭ একর, চিতলমারী দুই হাজার ৭৪ একর, শ্রীরামপুর ৩ হাজার ৩০৯ একর, রায়গ্রাম ৩ হাজার ৮০৩ একর, চরবানিয়ারী ৯৮৮ একর, খড়মখালী এক হাজার ১১১ একর, চরডাকাতিয়া ৯২৬ একর, সন্তোষপুর ৭৯০ একর, দড়িউমাজুড়ি এক হাজার ২২২ একর ও কচুড়িয়া ব্লকে ৯৬৩ একর মোট ২৯ হাজার ৪৩০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে ২৮ হাজার ৬৬০ একর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ৬৫২ ও স্থানীয় জাতের ধান ১১৮ একর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় ১৩৫.৮৫ একর বেশী। আর প্রতিটি ক্ষেতেই এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে অবশ্যই এ উপজেলার কৃষকরা লাভবান হবেন।

উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কৃষি অধ্যুষিত এ অঞ্চলে এ বছর েেত যেমন রোগ-বালাই কম ছিল। তেমনি ছিলনা কোনো পোকার উপদ্রব। তাই আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এ ফলনের নায্যমূল্য পেলে মিটবে তাদের ধারদেনা। সেজন্য প্রতিটি কৃষক পরিবারে সদস্যরা কাকডাকা ভোর থেকেই ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত। বসে নেই পরিবারের মেয়ে-গৃহবধু ও ছোট্ট শিশুরাও।

সুরশাইলের কৃষক শুধাংশু মন্ডল, কুরমনির দেবাশিষ বিশ্বাস, রেজাউল খান, বুদ্ধ বসু, পরিমল বিশ্বাস, উত্তম বসু, শ্রীরামপুরের নিমাই মন্ডল, শেখর ভক্ত, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, বোয়ালিয়ার টিটব বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর চাষিরা সতর্স্ফুত ভাবে ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ না হওয়ার কারণে এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য তাদের ভাগ্যে জুটছে না। বর্তমানে এখানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬২০ টাকা দরে। ওই দামে বিক্রির পরও ব্যাপারীরা তাদের টাকা ঠিক মত দিচ্ছেন না। তাই এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমির বোরো ধান নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী আসলাম বিশ্বাস, প্রদীপ দাস ও নান্নু শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে মিলে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু মিল মালিকেরা ঠিকমত পেমেন্ট না দেওয়ায় কৃষকরা সময়মত টাকা পাচ্ছেন না।

চিতলমারী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রানী ব্রক্ষ্ম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর সরকারি ভাবে প্রতিমণ ধান এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের কাছে ধান ক্রয়ের জন্য কোন চিঠি এখনো আসেনি। চিঠি আসলে সরকারি ভাবে এখানে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হবে। তখন কৃষক নায্যমূল্য পাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত