জর্জিয়ায় ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ রহমান চন্দন

মনজিলুর রহমান, আটলান্টা ( যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

আপডেট : ০২:৫৬ পিএম, রোববার, ৩ জুন ২০১৮ | ৮৩২

শেখ রহমান আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে স্টেট সিনেটর প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন, যিনি শেখ রহমান নামেই বেশি পরিচিত।

শুধু তাই নয়, এই নির্বাচনী আসন থেকে এবার রিপাবলিকান কিংবা অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায়, তিনিই এ পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ফলে শেখ রহমানই হতে যাচ্ছেন আমেরিকার আইনসভায় প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম বাংলাদেশি। গত ২২ মে অনুষ্ঠিত জর্জিয়ায় ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে শেখ রহমান মোট ৪ হাজার ২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ডেমোক্রেটিক পার্টির অপর প্রতিদ্বন্দ্বী কার্ট থম্পসন পেয়েছেন ১ হাজার ৮৮৫ ভোট।

প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোট দেয়া ব্যক্তিদের ৬৮ শতাংশই আস্থা রেখেছেন শেখ রহমানের ওপর। এদিকে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে রিপাবলিকান বা অন্য কোনো দল থেকে কোনো প্রার্থী নেই। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই হতে যাচ্ছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত স্টেট সিনেটর।

আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে শেখ রহমানের আগে বাংলাদেশের অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন জর্জিয়া থেকে জামিল ইমরান, ড. রশিদ মালিক, প্যানসালভেনিয়ায় নিনা আহমেদসহ অনেকে। কিন্তু তাদের কেউই প্রাথমিক নির্বাচনে বিজয়ের মুখ দেখেননি। এ ক্ষেত্রে শেখ রহমানের স্টেট সিনেটর হওয়াটা এক দারুণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

নরক্রস, লিলবার্ন ও লরেন্সভিল শহর নিয়ে গঠিত এই জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনী এলাকায় গত আট বছর ধরে ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে কার্ট থম্পসন সিনেটর নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ডেমোক্রেট ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকা থেকে রিপাবলিকান দলের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না বলে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ কার্ট থম্পসন এত দিন সহজেই বিজয়ী হয়েছেন। এবার বাংলাদেশি শেখ রহমানের কাছে প্রাথমিক বাছাইয়ে হেরে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর তিনি সিনেটর পদটি হারালেন।

এ সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় শেখ রহমান এই বিজয়কে বাংলাদেশিদের বিজয় বলে উল্লেখ করেন।বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বাংলাদেশি ও এশীয় ভোটারসহ ডেমোক্রেটিক দলের সংগঠক ও সদস্যরা যেভাবে পরিশ্রম করেছেন, সে জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’

শেখ রহমানের সহকারী প্রচার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট-৫-এর সিনেটর আসনটিতে বিজয় অত সহজ ছিল না। গত আট বছর ধরে এখানকার স্থানীয় অধিবাসী কার্ট থম্পসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনেটর নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

কিন্তু শেখ রহমান ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে শেখ রহমানের বিশেষ অঙ্গীকারকে জনগণ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আগামী ৬ নভেম্বর জর্জিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৫-এ সিনেটর পদে রিপাবলিকান দলের কোনো প্রার্থী নেই। অন্য কোনো ব্যক্তি বা দল থেকেও এ আসনে কেউ নির্বাচন করছে না। ফলে শেখ রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হচ্ছেন; এটা একরকম নিশ্চিত।

শেখ রহমানের রাজনৈতিক পরিচয় শুধু জর্জিয়ায় নয়, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। নিউইয়র্কের মার্কিন কংগ্রেস উইম্যান গ্রেস মেং এই প্রাথমিক নির্বাচনে শেখ রহমানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

এছাড়া নিউইয়র্ক ও জর্জিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার নির্বাচনী ব্যয়ের তহবিল গঠনে অর্থ সংগ্রহ করেন তারা। প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ের পর তাই শেখ রহমানকে অভিনন্দন জানাতেও ভোলেনি বাংলাদেশি কমিউনিটি। এই বিজয়ে শেখ রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অ্যাসাল-এর জাতীয় কমিটির সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, নভেম্বরে চূড়ান্ত নির্বাচনে তার (শেখ রহমানের) বিজয়ী হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শেখ রহমানের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায়। তার বাবার নাম শেখ নজিবুর রহমান ও মায়ের নাম সাইয়্যেদা হাজেরা বেগম। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি মেজো। তার এক বোন নাদিরা রহমান জর্জিয়া বাংলাদেশ সমিতির সাবেক সভাপতি। ব্যক্তিগত জীবনে শেখ রহমান বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।

তিনি ১৯৮১ সালে ঢাকার ডনস্ হাইস্কুল থেকে ইংরেজিমাধ্যমে মাধ্যমিক পাস করে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সে বছরেই তিনি ভর্তি হন নর্থ ক্যারোলাইনার একটি কমিউনিটি কলেজে। সেখানে পড়াশোনা শেষে তিনি ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া (ইউজিএ) থেকে ইকোনমিকস অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজে বিবিএ করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি রেস্টুরেন্টের ডিশ ওয়াশার থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছে। পরে ফুডচেইন পিৎজা হাটের কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি আবাসন ব্যবসা ও রেন্টাল প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। দুই বছর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির সবার নজরে আসেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত