প্রবাহমান নগ্নতা ও আজকের বিশ্ব !

গাজী ইলিয়াছ

আপডেট : ০৫:১৯ পিএম, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯ | ১৫০৫

চোখ খুললেই আমরা এ প্রকৃতির প্রায় সবকিছুকেই অনুভব করতে পারি। সূর্য, চাঁদ, আলো, বাতাস এবং সৃষ্টির সেরা জীব মানুষসহ ইত্যাদি অনেক কিছুকেই আমরা মানুষেরা সহজেই বুঝতে পারি। আজ এ বুঝানোর বিষয়টি সমাজকে ধ্বংসের ধার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝাতে চায়, আর এ নগ্নভাবে বুঝানোর ধ্যান ধারনা এবং তার চলমান প্রবাহ পৃথিবীর উদীয়মান জনগোষ্টীকে ধ্বংসের সাগরে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিটি সেকেন্ড়ে এ পৃথিবীকে গুনতে হচ্ছে অহরহ অানাচার, ধর্ষন, এসিড় নিক্ষেপ,সীমাহীন অপব্যয় ইত্যাদি অনেক কিছু ।

মানুষের চরিত্র নষ্ট করার এক বিনিয়োগে আজ আমরা নিমজ্জিত। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, আমরা যারা সভ্য দাবী করি তারাই এ বিনিয়োগে এ পরিবেশে বেশি নিমজ্জিত। তাঁরা তাঁদের তথাকথিত শিক্ষা দিয়ে ড়িজাইন করছে কিভাবে নগ্নতা প্রকাশ করা যায়। তাঁদের বিজ্ঞাপন,তাঁদের পোষাক ,তাঁদের নাটক,সিনেমা,ফেসবুক আইন ইত্যাদি এমনভাবে তৈয়ার করছে যাতে নারী জাতির নগ্নতা তাঁদের ব্যবসার প্রসারের আসল পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাঁদের সৃষ্ট এ ধ্যান ধারনা সমাজকে যে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন দেশের একজন শীর্ষ স্হানীয় ব্যাংকার তার turkey river ক্রুজের articles এ মেয়েদের নাচের বেশ কয়েকটি নগ্ন ছবি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন ভ্রমন তাঁর কেমন হয়েছিল কোন প্রাকৃতিক ছবি এখানে প্রাধান্য পায়নি? কানাডা প্রবাসী আমার এক আত্নীয় সেখানকার river ক্রুজের বর্ণনা দিয়েছিলেন, কি যে অবস্হা তা বর্ণনার মত নয়। এ হল তথাকথিত শিক্ষিতদের বিশ্ব। তাঁদের স্ত্রী, মেয়েদের পোষাকের ড়িজাইন এমনভাবে করা হয় যাতে নগ্নতা মুখ্য হয়ে থাকে। এই শিক্ষায় আজ মূখ্যভাবে প্রবাহমান। দ্রব্য ও সেবার গুনাগুন বুঝাতে আমরা মেয়েদের নগ্নতাকে আজ বেছে নিয়েছি। সারা বিশ্বে এই অবস্হাই এখন বিরাজমান। যেন নগ্ন এক বিশ্ব ! পৃথিবীর এ সকল সভ্যরা(দাবী করে) নীজে এবং তাঁদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে নগ্ন সামুদ্রিক বীচেই হলিডে কাটাতে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় আর টেলিভিশন মালিকরা ও হোটেল মালিকরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও খবরের মাধ্যমে তা দেখিয়ে অন্যকেও সুড়সুড়ি দেয় যাতে সেও এ নগ্ন পরিবেশে যায়।যারা যেতে পারে না তারা দেখেই চলছে।

এ মূহুর্তে যেখানে বসে লিখছি তা হল একটি তারকা খচিত হোটেল পাশে তিন জনের এক মুসলিম বিদেশী পরিবার বাবা পান্জাবী ড়্রেস, মা সালোয়ার কামিজ অষ্টাদশী মেয়ের পোষাক তথাকথিত সেই সকল ড়িজাইনারের ড়িজাইন দিয়ে তৈরী যাতে নগ্নতা প্রকাশের অবশিষ্ট কিছু আর নেই । আজকাল অনেক পরিবারকে দেখা যায়, যাকে বেশী হিজাবের মধ্যে রাখা উচিত তাকে নগ্ন ড়্রেস পরায় আর নীজে অনেকটা শালীন পোষাক পরিধান করে। এ পরিবারটিও সে রকম। মেয়েটি ছটফঠে ইংরেজী ভাষায় মা বাবার সংগে কথা বলছে। এখন বাস্তব সত্য হলো, কিছু ব্যবসায়ীরা মেয়েদের এ নগ্নতাকে দিয়ে business hunting করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত।কি ধরনের পোষাক পরিধান করে বিমানে আরো বিভিন্ন জায়গায় সেবার কাজ করবে তথাকথিত সভ্যরা আজ তা ঠিক করে দেয়। আজ এমন এক বিজ্ঞান আমরা সৃষ্টি করছি যা আমরা সকলে রপ্ত যেমন করছি তেমনিভাবে আমাদের কোমলমতিদেরকেও সেই পরিবেশে হারিয়ে দিচ্ছি। যে কারনে তারা আমরা আজ সকলেই বিপদগ্রস্হ! বলতে গেলে এ পৃথিবীই বিপদগ্রস্ত! বলুন আজ মানুষের মধ্যে এই লুলোপ দৃষ্টি শক্তি সৃষ্টির জন্য কারা দায়ী? কেন rape হয়? শয়তান কেন আমাদের পিছু ছাড়ে না? তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সমন্বিত International Dress code, Advertisement code, Design code ইত্যাদি না থাকা। পৃথিবী আজ নগ্নতার সাগরে ভাসমান। যার ক্ষতিকর প্রভাব সীমাহীন এবং যা এখন আমরা সকলেই বহন করছি। দুঃখজনক হল, প্রগতিশীল নারীবাদীরা তাঁদের এহেন নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা নিয়ে কোন আন্দোলন করে না? তাঁরা আন্দোলন করে ধর্ষকের শাস্তির জন্য। আপনাদের নগ্নতার জন্য শয়তান যে তাঁর মধ্যে লুলোপ আকর্ষন সৃষ্টি করে সে বিষয়ে কোন চিন্তা নেই এবং তা কি কারনে সৃষ্ট হয় তা নিয়ে কোন গবেষনা বা আন্দোলন আজ নেই। কোথায় নারী জাতির আসল প্রগতি ও কিভাবে তাঁদের নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষা করে সমুন্নত রাখা যায় তা নিয়ে কোন গঠনমূলক আলোচনা নেই। তাঁদের মূল্যবোধ পণ্যের মত ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা যে ফায়দা লুটছে সে সব নিয়ে তাঁরা আজ মাথা ঘামায় না। এ পৃথিবীর সকল নারী যদি তাঁদের মূল্যবোধ নিয়ে সচেতন হয় তাহলে এ পৃথিবী দারুন অন্য এক পৃথিবীর রুপ ধারন করবে বলে মনেকরি ! আজকাল তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বলতে গেলে নারীর নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিনিয়তই নির্যাতিত। এ নির্যাতন রোধ করতে এবং মূল্যবোধ রক্ষায় ঔষুধ দিতে হবে গোড়ায় আমরা দিই আগায়। আমি মনেকরি প্রতিটি ধর্মের নারীরই তাঁদের নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষায় চলমান নগ্ন পরিবেশ এবং তার সৃষ্টির বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত। যা পৃথিবীর বিলিয়ন বিলিয়ন ড়লার অপব্যয় যেমন হ্রাস করবে তেমনি সমাজের সকলেই সুষ্ট সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ পাবে। বিনিময়ে শয়তানের হাত থেকে আমরা সুরক্ষিত থাকব।তাই বলি, নারীদের এ সচেতনতায় পারে স্বচ্ছ সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে। সেখানেই নারীদের আসল প্রগতি ও নিরাপত্তা নিহিত বলে আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি। দুজন নোবেল বিজয়নীর পোষাক সকল নারীদের smartness এর মডেল হওয়া উচিত। একজন হলেন মহিয়সী নারী মাদার তেরেসা অন্যজন হলেন অল্প বয়সে(৩৪) নোবেল পাওয়া ইয়েমেনের মানববধিকার কর্মী তাওয়াক্কুল কারমান। কত সুন্দর dress পরিধান করে নারী হিসাবে ঊনারা বিশ্ব জয় করেছে। এ বিষয়ে প্রিয় তাওয়াক্কুল কারমানকে তাঁর বোরকা পরিহিত dress এর বিষয়ে সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তার জবাব ছিল-“ পুরাতন যুগে মানুষ একসময় কাপড় পরিধান করতো না, যখন মানুষ আস্তে আস্তে সভ্য হয়ে কাপড় আবিস্কার করল তখন থেকে মানুষ কাপড় পরিধান করতে শিখল।

এখন আমি শংকিত যে, আমরা যেভাবে পরিধেয় কাপড় ছোট করতে শুরু করেছি না জানি আবার পুরাতন যুগের সেই মানুষের মতো হয়ে না যায়”- কি চমৎকার জবাব! কোথায় সমস্যা? ঊনারাতো সব কাজই করেছেন? তাই আসুন সমাজ,আপনার ছেলেমেয়ে,সাস্হ্যকর পরিবেশ,অপব্যয় রোধ,রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষা সর্বোপরী নারী বা মা জাতির মূল্যবোধ রক্ষায় নগ্ন পোষাক পরিধান না করি, শালীনতা বজায় রাখি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত