বৃদ্ধ এবাদ আলী ফিরে পেলেন তার সম্মত্তি

রামপালে ভুয়া পিতা সাজিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি

রামপাল প্রতিনিধি

আপডেট : ০৫:২৪ পিএম, শনিবার, ৬ জুলাই ২০১৯ | ২৭৯৭

অবশেষে রামপাল উপজেলার বৃদ্ধ এবাদ আলী ফিরে ফেলেন তার সম্পত্তি। প্রতারক দুই পূত্র এসএম আবু জাফর ও মোঃ আমজাদ হোসেন ভূয়া এক ব্যক্তিকে পিতা সাজিয়ে ওই সম্পত্তি তাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছিলেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পিতা এবাদ আলীকে কমিশন রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে ওই সম্পত্তি একমাস পর ফিরিয়ে দিলেন সেই দুই প্রতারক পূত্র।

জানা গেছে রামপাল উপজেলার উজলকুড় গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ এবাদ আলী (৯০) এর দুই প্রতারক পূত্র এসএম আবু জাফর ও মোঃ আমজাদ হোসেন ভূয়া ব্যক্তিকে পিতা সাজিয়ে উপজেলার তেলিখালী এলাকার বাসিন্দা দলিল লেখক ইউসুফ আলীর সহায়তায় শংকরনগর, চাঁদপুর ও উজলকুড় মৌজায় এবাদ আলীর ৪ একর ৩৩ শতক সম্পত্তি গত ২১-০৫-১৯ ইং তারিখ রামপাল সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে সাবরেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে তাদের নামে হেবা দলিল মূলে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। যার দলিল নং-১১১৯/২০১৯। ওই সম্মত্তির মূল্য প্রায় কোটি টাকার মত বলে জানা গেছে। এদিকে ভূয়া ব্যক্তিকে পিতা সাজিয়ে ওই বিপুল পরিমান সম্মত্তি লিখে নেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে পিতা এবাদ আলী ও অন্য ছেলে মেয়েদের মধ্য পারিবারিক দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। আবু জাফর ও আমজাদ হোসেন বিষয়টি পারিবারিক ভাবে আপোষ মিমাংশার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩-০৬-১৯ ইং তারিখ উপজেলার গৌরম্ভা এলাকায় আবুজাফরের জামাই বাড়িতে বসে রামপাল সাব রেজিষ্ট্রার শাহাদাৎ হোসেন অতি উৎসাহি হয়ে পূণরায় ওই সম্পত্তি পিতা এবাদ আলীর নামে আবু জাফর ও আমজাদকে দাতা বানিয়ে কমিশনে রেজিষ্ট্রি দলিল করে দেন।

একাধিকবার সাংবাদিকরা ভুক্তভোগী এবাদ আলীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কথা হলে তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সঠিক দাতা যাচাই বাছাই না করে সাব-রেজিষ্ট্রার কি করে এতবড় একটা ঘটনা ঘটালেন ? দলিল লেখক ইউসুফ আলী ওই দুই প্রতারকের সাথে যোগসাজসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাব-রেজিষ্ট্রারকে দিয়ে এমনটি করেছেন বলে দাবী করেন।

বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে রামপাল উপজেলা সাব-রেজিষ্টার শাহাদাৎ হোসেনের মুখোমুখি হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমিও এক সময় বড় বড় জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছি। আপনারা তো উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিক। ভূয়া পিতা সাজিয়ে প্রতারণামূলক রেজিষ্ট্রির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি এক এক সময় এক এক ধরণের কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, দেখেশুনেই দলিলের ছবির সাথে দাতার ছবির মিল দেখেই রেজিষ্ট্রি করেছি। তবে কেন দাতা রেজিষ্ট্রি দেননি বলে দাবি করেন ? এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন বিষয়টি আমি মিট মিমাংশার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি আর দলিল লেখক ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তারা ফৌজদারী অপরাধ করেছে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এই দুই প্রতারকের ছবি রামপাল সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস সহ বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে দেওয়া হবে। শুনেছি আবু জাফর আগেও এ ধরণের কাজের সাথে জড়িত। তবে তিনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

দলিল লেখক ইউসুফ আলী, প্রতারক আবু জাফর ও আমজাদ হোসেনের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। এত বড় একটি প্রতারণার ঘটনায় সাব-রেজিষ্টার শাহাদাৎ হোসেন দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তার কর্মকান্ড নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলে বিষয়টি দুদকের হস্তক্ষেপের দাবী জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত