মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তোলপাড়

মোংলায় ড্রেজিং প্রকল্পে জ্বালানী তেল সরবরাহকে কেন্দ্র করে দু’টি চাঁদাবাজি মামলা

মো.মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৫:১৮ পিএম, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৪৭৭

প্রতিকী ছবি

মোংলা বন্দর জেটি হতে রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর নদীতে ১৩ কিলোমিটার পথ ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ প্রকল্পে জ্বালানী তেল (ফার্নিস/ডিজেল) সরবরাহের বকেয়া টাকা পরিশোধকে কেন্দ্র করে দু’টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরস্পর বিরোধী চাঁদাবাজি মামলা হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল বলছেন, এতে করে ব্যবসায়ীসহ এ বন্দরের অনেকটাই সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। দু’টি দেশীয় কোম্পানী পরস্পরের সাথে মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারীই এ বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে এমন আশংকাও দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুরু এন্ড সন্স কোং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনের মহলের সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে বেশ কয়েক বছর ধরে সুনাম অর্জন করে আসছেন এবং এ জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে সে কয়েকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এতে ঈর্শান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। সম্প্রতি এইচ এম দুলাল মোংলা বন্দর জেটির সম্মুখভাগ থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদী খননের আর্ন্তজাতিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভি’র সাথে জ¦ালানী তেল (ডিজেল/ফার্নেস) সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী তেলও সরবরাহ করেন দুলাল। কিন্তু তেল সরবরাহের মূল্য হিসেবে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভি’র কাছে মের্সাস নুরু এন্ড সন্স কোম্পানীর মালিক এইচ এম দুলাল প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওনা হন। এরই মধ্যে পাওনা টাকা থেকে তিন দফায় ৩৬ লাখ ২২ হাজার ৮শ’ এবং ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ও ২ কোটি টাকার চেক দেয় প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভি নামক কোম্পনীটি। কিন্তু ওই চেকের টাকা ছাড় করাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভি’র বাংলাদেশের স্থানীয় এজেন্ট খুলনাস্থ ৩ কেডিত্র এভিনিউ এলাকার সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ তার সহযোগীরা।

এর আগে ২০১৬ সালে সিগমা শিপিং লাইন্স’র মালিক শেখ মোঃ রফিকুল ইসলাম বাবলু জ্বালানী তেল সরবরাহ বাবদ চাঁদা চাইলে ব্যবসায়ীক স্বার্থে দু’দফায় নুরু এন্ড সন্স কোং পক্ষ থেকে তাকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা প্রদান করা হয়। অতি সম্প্রতি মুল কোম্পানীর জ্বালানী সরবরাহের দেয়া চেকের ওই টাকা ছাড় করাতে গেলে বাবলু ও তার সহযোগীরা নুরু এন্ড সন্স কোম্পানীর কাছে পুনরায় ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এ চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৬ আগষ্ট সকাল ১১ টার দিকে প্রকাশ্যে মোংলা বন্দরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং চত্বর এলাকায় বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুরু এন্ড সন্স কোং এর ম্যানেজার সাধন কুমার চক্রবর্তীকে সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ তার সহযোগীরা আগ্নেয়াস্ত্র¿ দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন, মারধর, অপহরণের চেষ্টাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।

এ সময় সাধনের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে বাবলু তার বাহিনী নিয়ে সটকে পড়ে। এ ঘটনায় মের্সাস নুরু এন্ড সন্স কোং এর পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে বাবলুকে আসামী করে মোংলা থানায় চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার দিনে মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোংলা থানার ওসি মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী।

এদিকে এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু নানাভাবে উঠে পড়ে লাগে। এ চক্র নিজেদের বাঁচাতে নুরু এন্ড সন্স মালিক এইচ এম দুলালকে জব্দ করতে নানা নীল নকশা ও ষড়যন্ত্র তৈরী করতে থাকে। এইচ এম দুলাল অভিযোগ করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জ্বালানী তেলের পাওনা টাকার চেক আটকিয়ে চাঁদা দাবি করেই বাবলু ক্ষ্যান্ত হননি উল্টো তার বিরুদ্ধে একই দিনের বিকেলের ঘটনা সাজিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আদালতের মাধ্যমে থানায় উদ্দেশ্যমুলক একটি মিথ্যা কাল্পনিক মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে মোংলা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধূরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চাঁদাবাজির দুটো ঘটনাই আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে কোনটি সঠিক ও আসল ঘটনা। ওসি অবশ্য এর বেশী কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বাবলুর বক্তব্য জানতে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত