ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ঋণের চাপে দিশেহারা মানুষ

চিতলমারীতে বুলবুলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মৎস্য বিভাগের প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ চিংড়ি চাষিরা

চিতলমারী প্রতিনিধি

আপডেট : ০৭:২৬ পিএম, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯ | ৪৯৪

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের দু’দিন পার হলেও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা এখনও লন্ডভন্ড রয়েছে। গাছপালা, ঘরবাড়ি, বৈদ্যতিক লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষিখাত শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবজি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে বাগেরহাটের ‘সাদাসোনা’ খ্যাত চিতলমারীর কয়েক হাজার চিংড়ি ঘেরের মাছ ভেসে গেলেও মৎস্য বিভাগের দায়সারা প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রীয়া ছড়িয়ে পড়েছে।

চিতলমারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ ঘোষ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে উপজেলার ৭ টি ইনিয়েনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে ২৪১ টি বসতঘর আশিংক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ৫ হাজার গাছপালা ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে। মূষড়ে পড়েছে কৃষি ও মৎস্যখাত। বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুত বিছিন্ন রয়েছে। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এক হাজার ৫০০ একর ক্ষেতের ফলন্ত টমেটো, সরিষা, পান, খেসাড়ি, ধান, মরিচ ও কপিসহ সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা আর্থিক বিবেচনায় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যানে এর পরিমান ১০ গুন বেশী বলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানিয়েছেন।

চিতলমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চিতলমারীতে মোট মাছের ঘের ১৭ হাজার ৭৩০ টি। তারমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ২৬৭ টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান ১৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

চিংড়ি চাষি রেজাউল দাড়িয়া, মুন্না শেখ, খোকন বিশ্বাস, তাপস ভক্ত, বিমল বালা, মিঠু শেখ ও সুজিত রায়সহ অনেকে ক্ষোভের সাথে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান মৎস্য কর্মকর্তার এ প্রতিবেদন দায়সারা গোছের। তাদের ভাষায় বুলবুলের আঘাতে কয়েক হাজার চিংড়ি ঘেরের মাছ ভেসে কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরপরও এনজিও কর্মিদের চাপে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

চিতলমারী সদর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর মুন্সি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তিনি ঝড়ের পরে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শুধু সদর ওয়ার্ডেই কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এরপরও থেমে নেই এনজিওদের ঋণ কার্যক্রম। তাই ঋণের চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ ও ইউপি সদস্য অনির্বান মন্ডল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তারা দুজনও চিংড়ি চাষি। বুলবুলের আঘাতে এ উপজেলায় মৎস্যখাতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চিতলমারী সাব জোনাল অফিসের এজিএম কাওছার আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ১৩২ টি পয়েন্টে তার ছিঁড়েছে ও ৩১ টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এ উপজেলায় ক্ষতির পরিমান নিছক কম নয়। এ পর্যন্ত এখানে ১৫০ ব্যাগ শুকনা খাবার, ৩০ বান্ডিল টিন ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১০০ বান্ডিল টিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত