চৌদ্দ বছর ধরে বন্ধ

বাগেরহাটের একমাত্র ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্র বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৯:৫৬ পিএম, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৩১০

বাগেরহাটের একমাত্র ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্র

বাগেরহাটের একমাত্র ব্যায়ামাগার ও যুব কেন্দ্রটি গত চৌদ্দ বছর বন্ধ আছে। চালু করতে নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ, ছাদের রড খুলে গেছে। দেওয়ালের প্লাস্টার উঠে গেছে। খসে পড়ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে, ভবনটি হয়েছে পরিত্যক্ত। সহায় সম্বলহীন এক রোগী এসে থাকছে কয়েক মাস ধরে। তারও মৃত্যুর ঝুকি আছে ওখানে থাকায়। তারপরও থাকেন সে, কারণ তার থাকার জন্য কোন জায়গা নাই । এসব কিছু চলছে বাগেরহাটের একমাত্র ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রে।

জানা যায়, বাগেরহাটের যুবকদের ক্রিড়া ও শরীর চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৭৭ সালে শহরের পিএনজি মাঠে পৌরসভার জায়গায় এটি তৈরি করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অর্থায়নে ভবন ও স্থাপনা করেন স্থানীয় ক্রিড়া প্রেমীরা। ১৯৭৮ সালের ২৪ অক্টোবর ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেঃকর্ণেল এ.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান।

তারপর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে চলত যুবকেন্দ্রটি। সারাদিন খেলাধুলা ও অনুশীলন করত স্কুল কলেজ পড়–য়া যুবকরা। সন্ধ্যার পর থেকে আসতেন চাকুরী জীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা। ক্রিড়া প্রেমিদের পদচারণায় যুবকেন্দ্রটি থাকত উৎসব মুখর। এটি-ই ছিল বাগেরহাটের একমাত্র ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্র। এখানে ইনডোর ও আউটডোর দুই ধরনের শরীর চর্চা ও খেলাধুলা করার সুযোগ ছিল। ইনডোরে ছিল ক্যারাম, দাবা ও টেবিল টেনিস। আউটডোরে ছিল বক্সিং, ভার উত্তোলন, যোগাসনসহ অনেক কিছু।

২০০৩ সালে যুবকেন্দ্রের পাশে পিএনজি মাঠে জেলা পরিষদ কর্তৃক স্বাধীনতা উদ্যানের মঞ্চ ও ছাউনি করার সময় যুবকেন্দ্রের অফিস কটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। তখন ভবনের ছাদ ফেটে অচল হয়ে যায় কেন্দ্রটি। তারপর থেকে আজও যুবকেন্দ্রটি অচল আছে। মাঝে ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের অনুরোধে রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় এটি।

জেলা ক্রিড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির উপ-পরিচালক শেখ হায়দার আলী বাবু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, কেন্দ্রটি বাগেরহাটের মানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে অনুশীলন করে অনেকে জাতীয় পর্যায়ে ভাল করেছে।


জাতীয় পর্যায়ে পদক প্রাপ্ত বক্সার এনায়েত, পারভেজসহ আরও অনেকে এখানে অনুশলীন করত। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বাগেরহাটের অপূরনীয় তি হয়েছে। যুবকেন্দ্রটির ভবন সংস্কারসহ ব্যবহার উপযোগী করতে পনের লাধিক টাকা প্রয়োজন। শরীর চর্চার সরঞ্জামাদি ক্রয়ে লাগবে পাঁচ লাধিক টাকা। আমরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়েও এটি সচল করতে পারি নাই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যায়ামাগারটি চালু করলে বাগেরহাটের যুব সমাজ উপকৃত হবে।

ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রের পরিচালনা কমিটির স¤পাদক এ্যাড. শহিদুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পরিচালক বুলবুল কবিরের কাছে চাবি তার সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বাগেরহাট ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রটির পরিচালক, অধ্যাপক বুলবুল কবির বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, স্বাধীনতা উদ্যানের মঞ্চ ও চাউনি করার সময় যুবকেন্দ্রের অফিস কটি ভেঙ্গে দেয় জেলা পরিষদ। ব্যবহারের অনুপযোগী হয় কেন্দ্রটি।পরে যুবকেন্দ্রের সরঞ্জামাদি ম্যাকফারসন পাবলিক লাইব্রেরি ও রোভার স্কাউট ভবনে রাখা হয়। তারপর থেকে অর্থাভাবে এটিকে সচল করতে পারি নাই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে, সচল করতে তিনি একটি আবেদন করতে বলেছেন। যতদ্রুত সম্ভব আমরা আবেদন করব।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক সরদার সেলিম আহমেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাগেরহাটের ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রটি সচল করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আবেদন করেছি। সেখানে আমরা ইতিবাচক সারা পেয়েছি। যুবকেন্দ্রটি সচল করার জন্য শীঘ্রই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

পদাধিকার বলে ব্যায়ামাগার ও যুবকেন্দ্রটির সভাপতি ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোজ নিয়ে দেখব কি অবস্থায় আছে। তারপর যতদ্রুত সম্ভব এটিকে সচল করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত