কারোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকা ও শাস্তি

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল

আপডেট : ০২:১০ পিএম, মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ ২০২০ | ৮৬২

বিশ্বব্যাপী আজ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে শিল্পী ও রাজপরিবারের সদস্য মারা গেছেন। তার মধ্যেও সারাবিশ্ব করো না প্রতিরোধের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরে থাকা, পরীক্ষা করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, হাত ধোয়া। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে রাস্তাঘাট সহ খোলা জায়গা, বাসাবাড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এই সংকটময় পরিস্থিতিতে পিছনের দিকে হাটা শুরু করেছে। তারপরেও রাষ্ট্রপ্রধান সাধারণ মানুষকে কোভিট- ১৯ থেকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শুধুমাত্র জরুরি সেবা বাদে সকল প্রতিষ্ঠান আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
দেশের মানুষের কল্যাণে ঘরে অবস্থান নেওয়া খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সাধ্য অনুযায়ী খাবার উপকরণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরকার সবকিছুই করছেন মানুষের সুস্থতার জন্য, নিরাপদে থাকার জন্য। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগণের সুবিধার জন্য সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। চেষ্টা করছেন মানুষের চাহিদা মেটানোর।এত পদক্ষেপ নেয়ার পরেও সরকারের নির্দেশনা না মেনে লম্বা ছুটির সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটেছেন। যাত্রাপথে ছিল অসংখ্য ভীর যা সংক্রমনের একটি সুন্দর পরিবেশ। কেউ কেউ ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিবাহ করে ফেলছেন, আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন।
বিদেশ ফেরত বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আচরনেও অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এদেশের মানুষ। তাদের নিজের পরিবার ও স্বজনদের সুস্থতার কথা চিন্তা করে ১৪ দিন হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার কথা থাকলেও তারা তা মানেননি। এরপরে ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের স্বজনরা। তাদেরকে সরকার নিরাপদে থাকার কথা বললেও তাদের আচরণ আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি। তার পরেও সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে। আমরা কি শুনছি সরকারের নির্দেশনা? মানতে পারছি কি সুস্থ থাকার উপায়?
সবকিছুর পরেও সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশ ফেরতদের নিরাপদে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা নিজেরা, তাদের পরিবার ও স্বজনদের ক্ষতি করার জন্য অন্যত্র পালিয়ে রয়েছেন। যখন মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতার জন্য সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নেমেছিল, তখন অধিকাংশ মানুষ ঘরে অবস্থান করা শুরু করেছিল। শুরু হয়েছিল অভিযান ও শাস্তি। সবকিছুই কিন্তু আমাদের সুস্থ রাখার জন্য, নিরাপদে রাখার জন্য, বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
হঠাৎই একজন এসিল্যান্ডের পদক্ষেপ নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে, যখনই তার পদক্ষেপের জন্য শাস্তি পেতে হয়, তখন থেকেই আবার মানুষ ঘর থেকে বাইরে বেরোতে শুরু করে। ওই কর্মকর্তা কিন্তু তার নিজের জন্য শাস্তি দেননি, তিনি দিয়েছিলেন ওই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য, সংক্রমণ থেকে মুক্ত করার জন্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার কঠোরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ও ওই দেশের মানুষের সচেতনতার কারণে সংক্রমণ অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের এদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে দ্রুত ছড়াতে পারে জীবাণু, আমরা কেউ কি ঝুকির বাইরে? রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে অধিকাংশ মানুষ তার গ্রামের বাড়িতে অবসর কাটাতে গেছেন।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, চৌকিদারের মাধ্যমে সতর্ক করার জন্য গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। এর মধ্যে অনেকে বিগত ২/৩ মাস আগে বাড়িতে যাওয়ার বাস ও লঞ্চের টিকিট দেখিয়ে তাদের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করছে। যাতে বাড়িতে থাকতে না হয়, বিভিন্ন জায়গায় অবাধে যাতে ঘুরতে পারেন। এই আচরণে তিনি কি নিজের, পরিবারের ,স্বজনদের ক্ষতি করছেন না?
একটা গল্প মনে হল, আজ থেকে ২০ বছর আগের, লোকটি মারা গেছেন, হঠাৎ আমার গ্রামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোকের সাথে দেখা তিনি আমাকে তার বাড়িতে একটু নিয়ে যাবেন, আমি প্রথমে যেতে চাইনি পরে অনেকটা তার পীড়াপীড়িতে যেতে হয়েছে। প্রথমে যাবার পরে আমাকে বারান্দায় বসালেন। তিনিও আমার পাশে বসলেন এবং ওখান থেকে তার স্ত্রীকে ডাক দিলেন, তার স্ত্রী পর্দার ভিতর থেকে আমাকে দেখলেন। আমাকে আপ্যায়নের জন্য কিছু খাবার তৈরি করতে বললেন। হঠাৎ গল্পের ছলে তার আঙিনায় একটি টিউবয়েল চোখে পড়লো আমার‌। আমি একটা প্রশ্ন করলাম, টিউবয়েলে কি আর্সেনিক আছে? তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন এবং বললেন ,আমি কি এতই বোকা! আমার টিউবয়েলে আর্সেনিক থাকবে। তার উত্তরে আমি অনেকটা অবাক হলাম। ভেবেছিলাম তিনি নতুন কোনো কিছুর সন্ধান পেয়েছেন মনে হয় আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল তৈরি করার। আবারো তাকে জিজ্ঞেস করলাম এর রহস্য কি? তিনি আমাকে অনেকটা গর্বের সাথে বললেন দাদু শোনো, যখন লোকজন আসলো আর্সেনিক পরীক্ষা করতে, আমাদের গ্রামের প্রায় সকল টিউবয়েলে লাল রং লাগিয়ে দিল, আমি ভাবলাম এরা তো আমাদের পানি খেতে দিবে না, দূর থেকে যখন খবর পেলাম তখন আমি বাড়ির পাশের খাল থেকে এক কলস পানি এনে টিউব অয়েল এর মধ্যে দিয়ে দেই। পরে উনারা আসলে আমি টিউবওয়েল চাপ দিয়ে পানি বের করে ওনাদের কাছে দেই, উনারা পরীক্ষা করে দেখলেন আর্সেনিক নাই। তারপর আর কেউ আসে নাই ।এই গ্রামের সব টিউবওয়েল বন্ধ আমারটা শুধু ঠিক আছে।
এইরকম বুদ্ধিমানের দেশে বুঝিয়ে বললে কি বাইরে বের হওয়া বন্ধ হবে? হয়তো কারো দ্বিমত থাকতে পারে, সরকার আইনগত পদক্ষেপ নিলে টকশো সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সমালোচনায় মশগুল থাকবে ‌। তাহলে করোণা প্রতিরোধে সরকার কিভাবে সফল হবেন? কেউ কেউ বলে থাকেন বুঝিয়ে নিতে। প্রায় এক মাস যাবৎ সরকার ,স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আর কিভাবে বুঝালে আমরা বুঝতে পারবো? সমালোচনা নয় আমাদের বাঁচতে হবে ,অবুঝদের বুঝানোর জন্য যদি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োজনে তাই করতে হবে ।তা না হলে আমরা বুঝবোনা, বোঝানোর বিকল্প কোন পদ্ধতি ও নাই। আমরা বাঁচতে চাই, নিরাপদে থাকতে চাই, ঘরে থাকুন, দূরত্ব বজায় রাখুন, সরকারি নির্দেশ মেনে চলুন।
খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল
সাংবাদিক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত