ধংসের পথে চিংড়ি শিল্প

চিতলমারীতে রেণু পোনা সংকটে চাষিরা

এস এস সাগর

আপডেট : ০৫:৪৭ পিএম, শুক্রবার, ৮ মে ২০২০ | ৮৯৮

চিংড়ি ঘের

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় চলছে চিংড়ি ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার মৌসুম। ভরা এ মৌসুমে ঘের তৈরি করেও চাষিরা ঘেরে পোনা ছাড়তে পারছে না। মরণঘাতি করোনার প্রভাবে বর্তমানে হ্যাচারীর পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে, প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ নিষিদ্ধ ও পরিবহন বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় সামান্য পোনা পাচ্ছে চাষিরা। ফলে রেণু পোনা সংকটে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা পড়েছেন। তাই এ উপজেলার চিংড়ি শিল্প এখন ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

চিতলমারী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩০ টি। যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৭৫৮ টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৮৭২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ ও ৬ হাজার ৯০০ টি পুকুরে বিভিন্ন মাছের চাষ হয়। এখানের চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবি রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত রয়েছে।

উপজেলার কুরমনি গ্রামের চিংড়ি চাষি বলরাম বিশ্বাস ও সুরশাইল গ্রামের মুন্না শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা চৈত্র মাসের শুরুতে পানি সেচ দিয়ে পুরানো মাছ ধরে এবং ঘের শুকিয়ে ফেলে। এরপর নানা পরিচর্যার পর নতুন করে পানি দিয়ে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে শুরু করে। সেই হিসেবে এখন চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে এভাবে চলে আসলেও মহামারি করোনার প্রভাবে এ বছর চিংড়ি রেণু পোনার সংকটে চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছে। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। এখানে প্রতি হাজার গলদা দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে এবং বাগদা প্রতি হাজার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় হাজার প্রতি ৫০০-৬০০ টাকা বেশী।

এ ব্যাপারে শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও পাটরপাড়ার ইউনুস বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ বছরও সময় মত ঘেরে রেণু পোনা ছাড়তে না পারলে এ অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প ধংসের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই সাথে বেকার হয়ে পড়বে কয়েক হাজার মানুষ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন রেণু পোনা সরবরাহকারী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, নদী থেকে পোনা আনার সময় তাদের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আড়তে পৌঁছাতে হয়। এ সময় ঘাটে-ঘাটে, রাস্তায়-রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। অনেক সময় চাঁদা না দিলে মাছ রাস্তায় ঢেলে ফেলে দেয়। তাই মাছের দাম বেশী পড়ে। অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে চায় না।

চিংড়ি রেণু পোনা আড়ৎদার শেখ মতিয়ার রহমান ও পংকজ বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, করোনার কারণে বর্তমানে হ্যাচারীতে রেণু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নদী থেকে আহরণকৃত মাছ সামন্য পরিমানে বাজারে আসলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এভাবে চলতে থাকলে এ শিল্প বিশাল ক্ষতির সম্মূখীন হবে বলে তারা ঊল্লেখ করেন।


তবে, চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, করোনার কারণে মাছের খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিছু হ্যাচারী গলদা রেণু পোনা উৎপাদন করলেও তা পরিবহনের জন্য সমস্যা হচ্ছে। তিনি যে কোন সমস্যায় তার ০১৭১৪-৯৩৯৩০৩ নং মোবাইল ফোনে চাষিদের যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত