পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

চিতলমারীতে মরা চিত্রা নদী বাঁচাতে স্বামীহারা নারীর আকুতি

এস.এস.সাগর

আপডেট : ১২:৪২ পিএম, রোববার, ২১ জুন ২০২০ | ১৭৭৪

চিতলমারীতে মরা চিত্রা নদী বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামীহারা নারীর আকুতি

বাগেরহাটের চিতলমারীর মরা চিত্রা নদী খননে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এক স্বামীহারা নারীর বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। এতিম সন্তানদের নিয়ে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৗশলীসহ সংশ্লিষ্ট অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ওই নারী তার বসতবাড়ি রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি সীমাহীন অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত এবং তার একমাত্র বসতবাড়ি রক্ষার দাবীও তুলেছেন।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সুরশাইল গ্রামের মরা চিত্রা নদী পাড়ের বাসিন্দা রূপালী বেগম। ২০০৬ সালে তার স্বামী রুহুল আমিন মুকুল দুটি নাবালক ছেলে মেয়ে রেখে মারা যান। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দর্জি কাজ করে তিনি তার ছেলে তারেক শেখ ও মেয়ে তমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। পাশাপাশি বহু কষ্টে নিজস্ব সম্পত্তিতে একটি আধা পাঁকা বাড়ি নির্মাণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিত অভিযোগে রূপালী বেগম উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মরা চিত্রা নদী পুনঃখননের নামে বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা-খুশি মতো কাজ করছে। চিত্রা নদীর পাড়ের কয়েকজন প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা বাঁচাতে গিয়ে নকশার পরিমাপের চেয়ে কম নদী খনন করা হচ্ছে। ফলে কমে গেছে প্রসস্থতা। পানি ভরা খালে চলছে খনন। এতে ওই নারীর বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। চিতলমারী-সুরশাইল-পাটরপাড়া সড়কে ফাঁটল সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রভাবশালীদের বাড়ির সামনে খননকৃত চিত্রা নদীর মুখের প্রসস্থতা ৪০ ফুটের কম। কিন্তু এই নদীর প্রায় পাঁচ-ছয়শ গজ দুরে খননকৃত মুখের প্রসস্থতা রয়েছে ৬০-৭০ ফুটের বেশি। একই নদীর খনন কাজে পাশাপাশি দুই জায়গায় মাপে এমন বৈষম্যের নেপথ্য কারণ কি? এ নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রূপালী বেগম জানান, এই স্বপ্নের নদী খননের জন্য অসংখ্য মানুষের ব্যক্তিগত ঘর-বাড়ি, গাছপালা, জমি নষ্ট হয়েছে। চিত্রাকে বাঁচানোর জন্য বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করেছেন তারা। কিন্তু হাতে গোনা কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি রহস্যজনক কৌশলে নদীর মধ্য হতে তাদের স্থাপনা বাচাঁনোর অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে চিতলমারী সদর ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মরা চিত্রা নদীর প্রায় এক কিলোমিটার নদী অত্যন্ত সরু হয়ে যাচ্ছে। খননের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকারের এই মহতি উদ্যোগ বিনষ্ট হতে বসেছে। ওই প্রভাবশালীরা তাদের স্থাপনা রক্ষার জন্য নানা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছে। তাদের তিন বারের মাপ তিন রকম হয়েছে। ওইসব প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে পানির মধ্যে দিয়ে নদী খননসহ সীমাহীন দূর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে।

রূপালী বেগম অভিযোগ করেন, বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামানসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মোঃ ইলিয়াস হোসেনের জন্য তার মাথা গোজার শেষ সম্বল বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি তার বসতবাড়ি রক্ষাসহ নদী খননের ‘সমুদ্র চুরি’র বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবী করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট অভিযোগে তিনি ইতোমধ্যে এই নদীর বিষয়ে বাগেরহাটের পাঠকপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোর ডট কম সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি যুক্ত করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে রবিবার বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগের কথা আমি শুনিনি। মরা চিত্রা খননে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। তিন বার কেন প্রয়োজনে আবারও মাপা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলব।

এ ব্যপারে ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান কাবিকো লিঃ এবং জুয়েল কনষ্ট্রাকশনের (জেভি) পক্ষে মোঃ ইলিয়াস হোসেন অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা অস্বীকার করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খাল খনন চলছে। এখনও কোন বিল পাই নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে নকশা দেবে ঠিকাদার সেই ভাবে খনন করবে। কোন কোন স্থানে নদীর পাশে নানা ধরণের স্থাপনা থাকায় নকশা ও পরিমাপ অনুযায়ী খনন কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে সময় ও ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে। এতে তাদের কোন হাত নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত