নতুন দেড় শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব

বাগেরহাট খান জাহান আলী বিমান বন্দরের মূল কাজ চলতি জুনে শুরু না হবার শংকা

মামুন আহম্মেদ

আপডেট : ০৩:৩৩ পিএম, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৮ | ১৩৪৬

বাগেরহাটে গত বাইশ বছর ধরে ধীর গতিতে চলমান খান জাহান আলী (র:) বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজে চলতি বছর আরেক দফা গতি আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিলো। ইতোমধ্যে বিমান বন্দর এলাকা সম্প্রসারণের জন্য আরও দেড় শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে। এই বছরের জুন মাস নাগাদ বিমান বন্দরের দৃশ্যমান মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবার কথা থাকলেও এ বিষয়ে এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল থেকে এখন খুব জোরালো কোন ভাষ্য মিলছে না। তবে স্থানীয় এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা কিছুটা স্পষ্ট ভাবেই বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন যে, অধিগ্রহণজনিত বিলম্বের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর জুনে প্রকল্পের মূল কাজ হয়তো শুরু করা সম্ভব হবে না।

বাগেরহাটের রামপাল ও সদর উপজেলার চারটি গ্রামে (ফয়লা, হোগলডাঙ্গা, গোবিন্দপুর ও গোদারডাঙ্গা) চলমান এই প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছুকাল আগে মাটি ভরাট করা এলাকার বাইরে নতুন কোন কাজ চলমান নেই। প্রকল্পের পশ্চিম দিকে নতুন অধিগ্রহণ করা এলাকায় বেশ কিছু নতুন টিনের ছোট অবকাঠামো দেখা যায়। জানা গেছে, অধিগ্রহণ হওয়া জমির বর্ধিত মূল্য পেতে গ্রামবাসী নিজ জমিতে এ ধরণের ঘর নির্মাণ করছেন। এই অবস্থায় প্রকৃতপক্ষে আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে জুন মাস নাগাদ সত্যিই সেখানে দৃশ্যমান নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি না, তা এলাকার মানুষের কাছে বড় একটি জিজ্ঞাসা হয়ে রয়েই গেছে।


মংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এবং সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা মাথায় রেখে ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খলেদা জিয়া বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মোংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী (র:) বিমান বন্দর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরও আগে রাষ্ট্রপতি লে. জে. (অব) হুসঈন মোহম্মদ এরশাদের সময়ে ঐ এলাকায় প্রায় ৪২ হেক্টর জমির উপর একটি শর্ট টেক অফ এ- ল্যা-িং (স্টল) বিমান বন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। পরে ঐ প্রকল্প আর সামনে আগায়নি।


গত প্রায় ২২ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়িত কার্যক্রমের তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপ ১৯৯৭ সালে সেখানে মাটি ভরাট কাজ শুরু করে। প্রায় ৪৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট কাজ ছাড়া তখন আর কোন কাজ হয়নি। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার মতায় এসে আবার মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যে অর্থাভাবে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়।


বর্তমান সরকারের সময়ে বাগেরহাট-খুলনা অঞ্চলে মংলা বন্দরকে ঘিরে ধারাবাহিক উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নতুন করে সামনে আনা হয়। পদ¥া সেতু নির্মাণ কাজের পাশাপাশি এই বিমান বন্দর নির্মাণ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় এই বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় এবং এ জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। তবে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের পর দুই বছর পার হলেও নতুন জমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বিভিন্ন বাঁধার কারণে খান জাহান আলী (র:) বিমান বন্দর নির্মাণ কাজ গতি পায়নি বলে বিভিন্ন সূূত্রে জানা গেছে।


বিশিষ্টজনদের মতে বাগেরহাট শহর, মোংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে প্রায় ২৫ মিনিটের সমদূরত্বে নির্মিত হচ্ছে এই বিমান বন্দরটি। বিমান বন্দরটি বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খান জাহান আলীর মাজার ও বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ, মংলা সমুদ্র বন্দর, মংলা রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, প্রক্রিয়াধীন মংলা-ঢাকা ও মংলা-খুলনা রেলপথ, চিংড়ি শিল্পসহ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। এসবের সম্মিলনে অবহেলিত দণি-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাড়ানোর শক্তি পাবে।


বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুন উল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন, বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে নতুন করে আরও ১৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভূমি জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের কাজ শুরু হচ্ছে।

এ বছরের জুন মাস নাগাদ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের সরসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুন উল হাসান এবং এই বিমান বন্দর প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ।

মো. শহীদুল আফরোজ মুঠোফেনে বলেছেন, ’জমি অধিগ্রহণের কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি আর মন্ত্রী ছাড়া আর কারও মিডিয়ার সাথে কথা বলার নির্দেশ নেই। আমি কিছুই বলবো না।’

এব্যাপারে এই বিমান বন্দর এলাকা সংশ্লিষ্ট বগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বর্তমান সরকার এই অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়নের স্বার্থে খান জাহান আলী (র:) বিমান বন্দরকে আধুনিক উন্নত বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আরও প্রায় দেড় শত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া হচ্ছে। জমির মালিকানা নির্ধারণের পর বিমান বন্দরের মূল কাজ শুরু হবে। এ নিয়ে বিলম্বের কারণে হয়তো চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে মূল কাজ শুরু করা যাবে না। তবে বিমান বন্দরটি নির্মাণে সরকারের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত