কোরআন শিক্ষার জন্য

মোংলায় বয়স্কদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ 

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৭:০০ পিএম, শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০ | ৫৪৭

মোংলায় মরহুম হাজী কাওসার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২য় ধাপে ৬০ জন বয়স্ক ও শিশুদের প্রাথমিক ভাবে কায়দা ও আমপাড়া শিক্ষা শেষে আজ তাদের হাতে পড়ার জন্য তুলে দেয়া হল পবিত্র কোরআন শরীফ। মোংলা কবর স্থান জামে মসজিদে জুম্মার নামাজের আগে বয়স্কদের ও ছোট কোমলমতী ছেলে মেয়েদের হাতে তাদের পড়ার জন্য এ কোরআন শরীফ দেয়া হয়। যারা ছোট বেলা থেক কোরআন শিক্ষা গ্রহন করতে পারে নি তাদের নিয়ে এ বয়স্ক কোরআন শিক্ষার কেন্দ্রটির উদ্যোগ গ্রহন করে মরহুম হাজী কাওসার ফাউন্ডেশন। বয়স্করা তাদের কাজের অবসরে যখন সময় পায় এখান থেকে আরবী শিক্ষা গ্রহন করছেন তারা। আর যারা কোরআন পড়তে জানে না তাদের কে সহী শুদ্ধ ভাবে কোরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এ কোরআনা শিক্ষা কেন্দ্র থেকে।
মোংলা পৌর সভার ৬৭ টি মসজিদের মধ্যে ৭ টি মসজিদে বয়স্ক কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র চালু রয়েছে। ভবিষ্যৎ এ সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি মসজিদে এ বয়স্ক কোরআন শিক্ষা যাতে চালু হয় সকলের সহযোগিতা করার জন্য বলা হয় জুম্মার নামাজে উপস্থিত সকল মুসল্লিদের।
এ বয়স্ক কোরআনা শিক্ষার উপর মোংলা উপজেলা ইমাম পরিষদের সাধারন সম্পাদক, কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং মরহুম হাজী কাওসার ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মোঃ আব্দুর রহমান জুমার নামাজে আগে তার আলোচনায় বলেন, কোরআনা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর মক্তব। মক্তব আরবি শব্দ। অর্থ লাইব্রেরী, গ্রন্থাগার, পাঠশালা। পারিভাষিক অর্থে মুসলিম পরিবারের শিশুদের ইসলামী শিক্ষাদানের জন্য যে সকল স্থানে একত্রিত করা হয়, তাই মক্তব। মক্তব শিক্ষা সর্বযুগে সবার জন্য ছিলো উন্মুক্ত; মসজিদে নববীতে ‘আছহাবে ছুফ্ফাথ নামক সাহাবাদেরকে শিক্ষাদানের জন্য রাসুল সা. একজন শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন, তখন থেকেই মক্তব শিক্ষার যাত্রা। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের মক্তবই হচ্ছে মুসলিম মিল্লাতের প্রথম পাঠশালা। প্রাচীনকাল থেকে মসজিদের বারান্দাকে কেন্দ্র করে চলছে এই মক্তব শিক্ষার কার্যক্রম। শিশুদের মক্তবে যাওয়ার চিরাচরিত এই দৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলা ও শহরে খুব একটা দেখা যায় না।
রোজ সকালে কোরআনের আওয়াজ কঁচিকাঁচা শিশুদের কন্ঠ থেকে বের হয় না। তারপরও ইতিহাসে রাজা-প্রজা, ফকির-বাদশা, আমির-উমারা, ওলি-দরবেশ, পীর-মাশায়েখ, প্রভু-ভৃত্য, কৃষক-শ্রমিক সবই ছিলেন মক্তবের ছাত্র। অনেক লোককে বলতে শুনেছি যে, আমি স্কুলের ধারে কাছে কোনো দিন যাই নাই, আবার অনেকে বলেছেন আমি মাদরাসার ধারে কাছে কোনো দিন যাই নাই। কিন্তু মক্তবে যাই নাই, এমন কথা বলার মতো লোক সমাজে সত্যিই বিরল। কারণ একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য মক্তব শিক্ষার বিকল্প নেই। তার সকলকে লোক লজ্জার ভুলে সহী ভাবে কোরআন শিক্ষা নিতে হবে। পরকালের জন্য আমাদের এ শিক্ষা সকলের নেওয়া উচিত মুসলিম হিসাবে।
বর্তমানে কোরআন শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। হারিয়ে যাচ্ছে ইসলামের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। যখন কোনো সন্তানের বয়স চার বছর চার মাস চার দিন পূর্ণ হতো, তখন তার বিদ্যা শিক্ষার সূচনা হতো। বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুরআনের কিছু অংশ শিশুকে পাঠ করে শোনানো হতো। শিশু তা পুনরাবৃত্তি করত। একসময় বাংলার পথে-ঘাটে ভোরবেলা ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা দল বেঁধে মক্তবে কুরআন শিক্ষার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতো। বর্তমানে তা দ্বীনি শিক্ষার অন্তরায়। জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। । মুসলমানদের ঐতিহ্যের ধারক মক্তবগুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়। তাই আমরা আপনারা যারা কোরআন শিক্ষা নিতে পারি নি, বয়স হয়ে গেছে তার এ বয়স্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র থেকে কোরআন শরীফ পড়া শিখে নিতে সবাই কে আহব্বান জানান তিনি। তা না হলে এর প্রভাবে তৈরি হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য বিশাল জনগোষ্ঠী। ভবিষ্যতে একটি দুর্বল জনগোষ্ঠিতে পরিণত হবে। বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি মসজিদে মক্তব চালু রয়েছে।
বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের ইসলামি বুনিয়াদি শিক্ষা দেয়া না হলে চিরতরে হারিয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যত। এ জাতি মদ, জুয়া, যিনা, ব্যভিচার ও নানা অপকর্মে জড়িয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। মক্তব ও বয়স্ক শিক্ষাকে বিলুপ্তির পথ থেকে পুনরায় চালু রাখা সর্বমহলের নৈতিক দায়িত্ব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত