ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও নাগরিক নেতাদের মধ্যে

উদ্বোধনের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও চালু হচ্ছে না খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল

মাসুদ রানা, মোংলা 

আপডেট : ১২:৩৭ পিএম, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪ | ২১৭

উদ্বোধনের প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বহু কাংখিত খুলনা মোংলা রেল লাইন রুটে এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল। কবে নাগাদ এ রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা। তবে একটি সূত্র বলছে, চলতি মার্চের শেষ দিকে এ রুটে যাত্রীবাহি ট্রেল চলাচল শুরু হতে পারে। এদিকে উদ্বোনের দীর্ঘ দিন পরেও এ রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও নাগরিক নেতারা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যৌথভাবে ভার্চুয়ালি খুলনা-মোংলা রেল লাইন প্রকল্প উদ্বেধন করেন। এর আগে ৩০ অক্টোবর খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামুলক ট্রেন চালানো হয়। তবে এর পর বেশ কয়েকমাস কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত এ রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসাব করে এই প্রকল্পে রেলপথ বসে ৯১ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুবরো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ভারতের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এই রেলপথে রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণকাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়। ৯টি স্থানে আন্ডারপাস (রেল লাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার রাস্তা) নির্মাণ করা হয়েছে। আন্ডারপাসের কারণে ট্রেনগুলোকে ক্রসিংয়ে থামতে হবে না। দুর্ঘটনারও ঝুঁকি থাকবে না। এই রেলপথের আট স্টেশন হলো ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, দিগরাজ, কাটাখালী, চুলকাঠি, বাঘা ও মোংলা।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, লাইন চালু করতে দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এই রেলপথে আটটি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন এবং লাইন ক্লিয়ারিংয়ের জন্য ৫৭৬ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। যেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ জনবল নতুন করে নিয়োগ দেয়া হবে নাকি দেশের অন্যান্য রেলঅঞ্চল থেকে নেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়াও স্টেশন নির্মাণ করা হলেও সেখানে এখনও রেলস্টেশন আসবাবপত্র দেওয়া হয়নি। কোনো রেলক্রসিংগুলোতে নিযুক্ত করা হয়নি কোনো জনবল। রেল লাইনের কাজ শেষ হলেও এ রুটে চলাচলকারি ট্রেনের সময়সূচি, ভাড়া ও শিডিউল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এগুলো শেষ হতেও সময় লাগবে। এ ছাড়া মোট কতটি ট্রেন চলবে, ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া এখনও নির্ধারণ হয়নি। ফলে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই ট্রেন চলবে।
তবে প্রকল্প পরিচালক আনিসুজ্জামান জানান, সব কিছু ঠিতঠাক থাকলে চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে এ রুটে বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ রুটে ট্রন চলাচলের জন্য উল্লেখযোগ্য আর কোন কাজ বাকী নেই। এর আগে ১ জানুয়ারী থেকে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু করনার কথা থাকলেও সে সময়ে কিছু কাজ বাকী থাকার জন্য ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে মোংলা থেকে খুলনা ও যশোর রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে এ রুটে বহুল কাংখিত যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও নাগরিক নেতারা। সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব ট্রেন চলাচল শুরু হোক। তবে কাজের এই দীর্ঘসূত্রীতায় আমরা হতাশ। উদ্বোধন করা হয়েছে আগেই। এখনও চালু হয়নি। এতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। মোংলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক মোঃ নুর আলম শেখ প্রশ্ন করে বলেন, উদ্বোধনের চার মাস পরেও কেন ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে না এর নেপথ্যে কি কোন ষড়যন্ত্র কাজ করছে কি না? খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি এ রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু করার দাবি জানান।
অপরদিকে মোংলা বন্দর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ভিপি শাহ আলম বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি খুলনা-মোংলা রেল লাইন স্থাপিত হওয়াসহ উদ্বোধন হয়েছে কয়েকমাস আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চালু না হওয়া অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশা জনক। তিনি অতি দ্রুত এ রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু করার দাবি জানান।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত