বাগেরহাটে স্কুল চলাকালীন সময়ে

কোচিং বন্ধের ঘোষণা, চলবে ভ্রাম্যমান আদালত

জিএম মিজানুর রহমান

আপডেট : ০৩:০৩ পিএম, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১৩৫৮

কোচিং

বাগেরহাটে চলছে কোচিং বিরোধী অভিযান। বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ কোচিং বাণিজ্য রোধ, শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী ও শিক্ষকদের পাঠদানে উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন।


সাম্প্রতি বাগেরহাটের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গিয়ে ঐ সময়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে সময় কাটায়। আবার কোচিং সেন্টারের গুরুত্ব বেশি দেওয়ায় স্কুলে উপস্থিত হয়েও কাসে অমনোযোগী থাকে। গুটি কয়েক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকরাও কাসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। কিছু কিছু শিক্ষক স্কুল সময়ে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ান বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ থাকলেও বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে চুলকাঠি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, “ বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সব কথা শুনি বা দেখি।

বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুলে অবস্থান করতে হয়। কোনক্রমে স্কুল বাদ দিয়ে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং করানোর সুযোগ নেই। তবে কোচিং বা স্কুল সময়ে প্রাইভেট পড়ানোর প্রভাব স্কুলের উপর পড়ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ কারণে কাঙ্খিত শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে না।” যদিও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশনা রয়েছে।

অপরদিকে কোচিং বাণিজ্যের দৌরত্বের কারণে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়ে। ব্যবহারিক বা মৌখিক পরীক্ষার নম্বরের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা স্কুল শিক্ষকদের কোচিং এর দিকে ঝুকে পড়ে। আবার অভিভাবকরা মনে করেন, স্কুলে ৬ ঘন্টা অবস্থান করতে হয় আর যাতায়াতের জন্য আরও বেশি সময় শিক্ষার্থীদের নষ্ট হয়। কিন্তু কোচিং এ এক থেকে দুই ঘন্টায় সকল বিষয় পড়ানো হয়। তাই অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে শিক্ষার্থীরা কোচিং এ ঝুকে পড়ে। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দিনে দিনে নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে শিক্ষকরা মনে করেন।

কোন কোন ক্ষেত্রে কোচিং এর নাম করে শিক্ষির্থীরা দীর্ঘ সময় বাইরে অবস্থান করছে। এতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হবার আশংকাও রয়েছে। এ সকল কারণে বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ স্কুল সময়ে কোচিং বন্ধ করতে মাঠে নেমেছে।

গত ২৯/০৯/১৭ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে স্কুল সময়ে কোচিং বন্ধের বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হবার পর বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে স্কুল সময়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে। স্কুল সময়ে কোচিং চালু থাকলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কথা ব্যক্ত করা হয়। সভায় স্কুল চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ সকাল ৯ টা হতে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত সকল ধরণের কোচিং বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। কোচিং এর পরিচালকসহ শিক্ষকদের বায়োডাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দান পূর্বক স্কুল সময়ের বাইরে কোচিং পরিচালনার কথা বলা হয়।

রাষ্ট্রীয় দিবস ছাড়া কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের জন্ম দিবসসহ কোন ধরণের আনন্দ উৎসব পালন করতে নিষেধ করা হয়। তবে স্কুল শিক্ষক স্কুল সময়ান্তে ৮ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত কাস বাবদ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হারে কোচিং করাতে পারবেন। এ নিয়মের ব্যতয় ঘটলে দায়ী শিক্ষক ও কোচিং পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে স্কুল সময়ে কোচিং বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কথা বলেন। এ প্রসংগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার এসএম হিশামূল হক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, স্কুল সময়ে কোচিং বন্ধের মনিটারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাছুদা আক্তার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, স্কুল সময়ে কোচিং চালালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যব¯া’ নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নুরুল হাফিজের সাথে কথা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, “ স্কুল সময়ে প্রাইভেট বা কোচিং বন্ধ হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে । অনেক কোচিং সেন্টার তাদের বায়োডাটা জমা দিচ্ছে।

সরকারী স্কুল বা কলেজ সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পাঠদানে আন্তরিক হয়েছে। রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ের সভায় বিষয়টি সকলকে অবহিত করা হয়। স্কুল সময়ে প্রাইভেট বা কোচিং এ পড়ার অভিযোগ পেলে তিনি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবেন বলে জানান।”

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত