খুনী, অর্থ পাচারকারী এবং সুদখোররা সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

তৈয়বুর রহমান টনি নিউ ইর্য়ক

আপডেট : ০৪:৫৬ পিএম, মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৯৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, খুনি, অর্থ পাচারকারী এবং সুদখোররা আওয়ামী লীগ সরকারেরবিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে ফেলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে, এরা ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে মিলেদেশ ধ্বংস করবে। কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সম্মানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি, অর্থ পাচারকারী ও সুদখোররা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোটহয়েছে। এরা দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে। ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে দেশ ধ্বংস করবে।কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’

সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন‘যুক্তফ্রন্ট’ এবং ডা. কামালের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ শনিবার মহানগর নাট্যামঞ্চে নাগরিক সমাবেশকরে।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ওই সমাবেশে যোগ দেন। যোগ দেন আরও কিছু ছোট দলের নেতারাও।

ওই সমাবেশ থেকে নির্বাচনে র আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষসরকার গঠন করতে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

এ দাবি না মানা হলে পরদিনথেকে আন্দোলন শুরু হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়।

সমাবেশ মঞ্চে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কামাল হোসেনের পাশে বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জাফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টর মইনুল হোসেন।

নাগরিক সমাবেশে নেতাদের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অপরাধটা কী? দোষটাকী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কী কাজটা করিনি দেশের জন্য?’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এরা সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনি। এভাবে সব আজ এক জায়গায়।

এসব দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন! কামালহোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে?’

বদরুদ্দোজা-কামালদের সমাবেশে ব্যারিস্টর মইনুল হোসেনের উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সঙ্গে গেছেন মইনুল হোসেন।

সে আবার কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করে; সে জায়গা নিয়ে মামলাআছে। সাজু হোসেন ভার্সেস রাষ্ট্র। সে মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত।’

‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামেদখল নেয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সব এখন এক জায়গায় হয়েছে।’

গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোবেল প্রাইজপাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। কারণ এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না।

বক্তব্যে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নতুন দল গঠনে ড. কামালের ব্যর্থপ্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগেবাধ্য করা এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে (বি চৌধুরী) যে রেললাইনের ওপর দিয়ে ধাওয়া করে, সে কথাওস্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতকিছুর পরও আমি চাইব তারা একটি জোট গঠন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকরুক। তারা যদি জনগণের ভোট পায়, তাহলে ক্ষমতায় আসবে।

যেহেতু তারা একটি জায়গায় সমবেত হতেপেরেছে, সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩, ১৪, ১৫- এই তিন বছরে বিএনপি-জামাতের পেট্রলবোমা হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৮-২৯ জন সদস্যসহ ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে।’

তিনি বলেন ‘তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা রাজনৈতিক নয়। এগুলো হত্যা মামলা।

আগুন দিয়ে পুড়িয়েমানুষ হত্যার মামলা।’ দেশ ও জনগণের কল্যাণে সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখহাসিনা বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে চলেছি। ক্ষমতাআমার কাছে ভোগের বিষয় নয়।

এটাকে আমি জনগণকে সেবা দেয়ার একটি সুযোগ হিসেবেই বিবেচনা করি।জনগণ যদি চায় তাহলেই ক্ষমতায় থাকব, না হলে নয়।’

সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধকরার জন্যই আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছি।

সাংবাদিকদের একটি অংশ এই আইনের বিরুদ্ধেব্যাপক প্রচারণায় নেমেছে। কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই, তারা এসব করছে নিজস্ব স্বার্থে।

ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সমাজের যে ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে তাদের দৃষ্টি নেই।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করায় এবং তার সরকারের প্রদত্তলাইসেন্স গ্রহণ করে দেশে বিপুল সংখ্যক সংবাদপত্র এবং নিউজ চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা অবাধে তাদের নিজস্ব মতামত প্রচার করে যাচ্ছে।’

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন চাইলে নৌকামার্কায় ভোট দিতে হবে। শিগগিরই ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক আসতে পারব।

শেখ হাসিনা প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আমার আর নিউইয়র্কে আসা হবেনা।তাই আপনাদের কাছে ভোট চেয়ে যাচ্ছি। আওয়ামীলীগ যাতে জিততে পারে, আপনারা তার ব্যবস্থা করুন।বাংলাদেশে আপনাদের আত্মীয়-স্বজন-পরিচিত সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বলুন।

হিলটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বলানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীডা. দিপু মনি, মন্চে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম ফজলুর রহমান, সহসভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, মাহবুবুর রহমান, আবুল কাশেম, শামসুদ্দিন আজাদ, লুৎফুলকরিম, ডা. মো. আলী মানিক,যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারমান নিজাম চৌধুরী, যুগ্মসম্পাদিকা আইরিন পারভিন।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্হীত ছিলেন মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীমেহের আফরোজ চুমকি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইর্য়কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতমাসুদ বিন মোমেন ও নিউ ইর্য়কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রআওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। রোববার স্থানীয় সময় দুপুরে তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছেন।

২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। একই দিন তার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত