রামপালে নির্দিষ্ট সময়ে ৮৩ টি খাল খনন বাস্তবায়নে নানান চ্যালেঞ্জ

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৫:৩৯ পিএম, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ | ৯৩২

বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮৩টি খাল ও নদী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খনন করা সম্ভব না হলে আবারও মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ প্রটোকল চ্যানেলটি হুমকির মুখে পড়তে পারে।


প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধীকার এ মেগা প্রকল্পটি ৭ শত ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৩৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। যা গত ২০১৮ সালের জুনে শুরু হয়েছে এবং ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হবে।


সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাল ও নদীগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মত প্রকাশ করেন। এতে মংলা বন্দরের নৌ চলাচলে গতিশীলতা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র সুরক্ষা, এ এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ রুটের নাব্যতা বৃদ্ধি, দ্বিমুখি ও দিবারাত্র সার্বক্ষনিক নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘসময় খাল ও নদীগুলি সংস্কার না করা, অধিকহারে পলি জমে ভরাট হওয়া, খাল ও নদীতে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ছোট ব্রীজ, কালভার্ট, কাঁচা-পাকা রাস্তা নির্মান করা, মাটি রাখার জায়গার অভাব, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মান করা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নদী-খালের সাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করা, ভরাট হয়ে যাওয়া খাল ও নদীগুলিতে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ব্যক্তি মালিকানা জমি রেকর্ড করা, ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান ও আবাসন প্রকল্প নির্মান করা, খননের সময় মামলা-হামলা ও ভয়ভীতি প্রদান করে খননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ নানান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব কারনে খনন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, ৮৩ টি খাল ও নদীর মোট ৩ শত ১০ কিলোমিটার খনন করে ১৪৭.৫ লক্ষ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নদীর ৫৭.৫৮৩ কিলোমিটার ও ৭৮ টি খালের ২৫৫.৪১৭ কিলোমিটার খনন করা হবে। গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী খনন কার্যক্রম শুরু করে। তাদের কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় পরবর্তীতে ৮৩ টি নদী ও খালের মধ্য থেকে ৪৬ টি তাদের অনুকূলে রেখে বাকি ৩৭টি অন্যান্য ঠিকাদারদের মাধ্যমে খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে ২৯ টি খালের প্রায় ৮০ কিলোমিটার খনন করে ৩০ লক্ষ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করে খালগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪ টি নদী ও ২৫ টি খাল খনন চলমান রয়েছে। চলমান ওই সব খাল থেকে আরও প্রায় ৩০ লক্ষ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। গত ২০ মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক তৃতীয়াংশের বেশী মাটি খনন করেছে। বাকি প্রায় ১ কোটি ঘনমিটার মাটি মাত্র ১৭ মাসে উত্তোলন করতে হবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেণ বিশেষজ্ঞরা।

বিশিষ্ট নাগরিক নেতা ও পরিবেশবিদ এ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদা এর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মংলা বন্দর সচল, সুন্দরবন রক্ষা, এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ পথের নৌ চলাচলের জন্য নাব্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা করতে হলে চ্যানেল সন্নিহিত নদী ও খাল খনন করে দ্রুত খুলে দিতে হবে। খনন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হলে এ মেগা প্রকল্পের কোন সুফল মিলবে না। পরিপূর্ণভাবে এর সুফল পেতে হলে শাখা নদী ও শাখা খালের পাশাপাশি জোয়ার ভাটার প্লাবন ভূমি তৈরি করতে হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিকভাবে নদী খনন করতে হবে তা না হলে খালগুলি আবার দ্রুত ভরাট হয়ে যাবে। আর এটা না করতে পারলে প্রকল্প ব্যায় বহুগুন বেড়ে যাবে। তিনি কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদ-উজ জামান খান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খাল খননের শুরুতেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। আমরা দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছি। আশাকরি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধীকার ভিত্তিক এ মেগা প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আমরা যথা সময়ের মধ্যে খাল ও নদীগুলি উন্মুক্ত করে এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রমের উপর সার্বক্ষনিক নজরদারী করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজে যাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় এজন্য জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে খনন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত