করোনার প্রাদুর্ভাবে চরম সংকটে চিতলমারীর স্বর্ণশিল্পীরা

এস এস সাগর

আপডেট : ০৬:১৭ পিএম, সোমবার, ১১ মে ২০২০ | ১০৯৯

‘টানা প্রায় ৪৫ দিন চলছে অঘোষিত লকডাউন, সোনার দোকান বন্ধ। দোকান বন্ধের কারণে কাজও বন্ধ। তাই আমরা স্বর্ণশিল্পীরা চরম সংকটে পড়েছি। দেনায় দেনায় জর্জরিত হয়ে গেছি। দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাড়িতে আছি। আমাদের এখন আর কেউ ধারকর্য দিতে চায় না। তাই ছোট্ট দুধের বাচ্চা নিয়ে আছি মহাবিপাকে। জানিনা আর কবে কিভাবে পরিবারের সদস্যদের ঠিকমত খাবার দিতে পারব।’-সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে বসে কথা গুলো বলছিলেন স্বর্ণশিল্পী সঞ্জয় কর্মকার (৪৫)।

তিনি আরও জানান, যুগ যুগ ধরে স্বর্ণালংকার মর্যাদার প্রতীক। সৌন্দর্য সমৃদ্ধির জন্য স্বর্ণালংকার দিয়ে নারীরা অলংকৃত হয়ে আসছেন। ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক এ পেশার কারিগরি ও বিপনন খাতে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষ। মরণঘাতি করোনার কারণে আজ তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বাষট্রি বছরের নারায়ন চন্দ্র দত্ত। ছোট্ট বেলায় সোনার কাজে হাতে খড়ি। স্ত্রী দুলালীকে নিয়ে ২৫ বছর ধরে আছেন চিতলমারীতে। বোয়ালিয়া ভ্যানস্ট্যান্ডে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। এতদিনে মানুষের দোকান থেকে চুক্তিতে কাজ এনে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করতেন। করোনার কারণে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই জুয়েলার্স গুলো বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কাজ। পড়ে যান মহাবিপাকে। স্ত্রীকে নিয়ে তারও জীবন-জীবিকা চলছে কোন মতে।
নারায়ন চন্দ্র দত্ত বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পৃথীবিতে আমার আপনজন বলতে কেউ নেই। খোঁজ-খবর নেয়ার মতও কেউ নেই। তাই স্ত্রীকে নিয়ে আমি এখন চরম অসহায় হয়ে পড়েছি। আমরা দুজনই এখন চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের ভোটার।

স্বর্ণ শিল্পী পলাশ খান (৪২)। জীবিকার তাগিদে ছুটে আসেন চিতলমারীতে। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, মা ও ভাইপো-ভাতিজিদের নিয়ে ৮ সদস্যর পরিবার তার। থাকেন ভাড়া বাড়িতে। এতদিন মোটামুটি সংসার চালালেও করোনার প্রভাবে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কাজ বন্ধের কারণে সংসার চালাতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন।

পলাশ খান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পরিবার নিয়ে বাঁচার তাগিদেই চিতলমারীতে এসেছিলাম। কিন্তু মরণব্যাধি করোনার কারণে আজ নিঃস্ব হয়ে গেছি। জানিনা এভাবে আর কতদিন মানবেতর ভাবে বাঁচতে হবে।

চিতলমারী সদর বাজারের স্বর্ণশিল্পী মনি শংকর অধিকারি, সুকেশ মন্ডল ও দিপক কর্মকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, শুধু সঞ্জয় কর্মকার, নারায়ন চন্দ্র দত্ত, আর শিল্পী পলাশ খান নয় এ উপজেলায় কমপক্ষে অর্ধশত স্বর্ণশিল্পী রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই চরম সংকটের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে শিল্পীদের বাঁচাতে হবে। আর শিল্পীদের বাঁচাতে হলে করোনার এ কান্তিলগ্নে তাদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি চিতলমারী শাখার সভাপতি ফণি ভূষণ কর্মকার ও সাধারন সম্পাদক অমল কৃষ্ণ কর্মকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অর্থনীতি এখন টলমলে। করোনা ভাইরাসকে আটকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এমনিতেই সোনার ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। তার উপর এমন অবস্থায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। তাই বর্তমানে স্বর্ণশিল্পের কারিগররা চরম সংকটে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত