করোনায় কি হারিয়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব !

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল

আপডেট : ১১:৩৫ এএম, বুধবার, ৩ জুন ২০২০ | ৮৭৯

“দশে মিলে করি কাজ,হারি যিতি নাহি লাজ” এধরনের প্রবাদ সহ ঐক্যের অনেক প্রবাদ রয়েছে এদেশের মানুষের মনে। বাঙ্গালীরা আবেগ প্রবন,আর এই আবেগ কে পুজি করে অনেক দুষ্ঠু চক্র গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্ঠা ও হয়েছে বহুবার। এদেশ সম্প্রীতির দেশ, এদেশের মানুষের মনুষ্যত্ব,ভ্রাত্রিত্ববোধ, সহানুভুতি সব সময়ই ছিলো প্রখর। বাবা,মা,ভাই,বোন,আত্বীয় স্বজনদের প্রতি রয়েছে অঘাত বিশ্বাস ও ভালোবাসা।

নিজের সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি একটু ব্যবসা করার চেষ্ঠা করছি। তাই ব্যবসার কারনে গত ১৮ মার্চ ঢাকায় যাই,সাথে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা। ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ততার মধ্যে দেশে করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার দেশের মানুষকে সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পুরো দেশের গণপরিবহন,দোকানপাট,অফিস আদালত ছুটি ঘোষনা করেন। এমনই সময় আমি এলাকায় না আসতে পেরে ঢাকায় অবস্থান করি। পুরো দুই মাস নিজের ও পরিবারের কথা ভেবে বাইরে বের হইনি। দু-মাসে ৪বার বাসার বাইরে বের হয়েছি শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য। তাও বের হয়েছি যখন ভীড়টা কম থাকে দুপুরের সময়ে মুখে মাস্ক, হ্যান্ডগøাভস, চশমা ও মাথায় টুপি পড়ে।

প্রতিদিন বাড়ীতে থাকা বাবা,মা ও ছোট ভাইয়ের সাথে কমপক্ষে ৩বার কথা হতো ফোনে, অনেক সময় ভিডিও কলের মাধ্যমে। এছাড়া আত্বীয় স্বজনদের সাথেও চলতো নিয়মিত ফোনালাপ। আমার দুজন কাকার সাথেও ছিলো প্রতিদিনের যোগাযোগ। তারপরেও কেন জানি দুশ্চিন্তায় থাকতাম বৃদ্ধ বাবা ও মায়ের জন্য।

রোজার শেষের দিকে একদিন সকালে হঠাৎ বাবার ফোন পেয়ে অনেকটা বেশী বাড়ীতে ফেরার জন্য মনস্থির করলাম। তিনি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বললেন, তোমার বিকাশ নাম্বার কোনটা? আমি বললাম নাম্বারটি,পরে প্রশ্ন করলাম কেন? তিনি বললেন, সামনে তো ঈদ তাই ওদের (আমার ছেলে মেয়ে)। সামনে ঈদের সময় কিছু কিনে দিস। আমি বারন করার পড়েও তিনি টাকা পাঠালেন। আর বললেন,কখনো ওদের রেখে তো ঈদ করিনি মনটা ভালো লাগছেনা। তার কথা শুনে আমিও অনেকটা আবেগী হয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ভাড়ায় চালিত গাড়ীর চালককে ফোন দিলাম,চড়া দামের মধ্যেও তুলনামুলক কম দামে ঠিক করলাম এবং বিকালেই রওয়ানা হবো বলে প্রস্তুতি নিলাম। হঠাৎ বিকালে খবর পেলাম ফেরি বন্ধ হয়েগেছে,কোন গাড়ী চলাচল করতে পারবেনা। তখন বাবাকে জানালাম ও আপাতত বাড়ী যাওয়া স্থগিত হলো। তারপরেও মন মানছেনা, কয়েকদিন পরে হঠাৎ এক চালকের ফোন,স্যার ফেরি ছেড়েছে যাবেন কি? কোন চিন্তা না করেই বললাম যাবো। গরম থাকায় পরে ওই দিন রাতে বাড়ীতে চলে আসি পরিবারের সকলকে নিয়ে। তাও নিজেদের পুরো স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে।এটাই বাঙ্গালী চরিত্রের একটা স্বাভাবিক চরিত্র। এমনটাই চলে আসছে যুগযুগ ধরে।


করোনা মহামারীর কারনে মানুষকে সরকারী বেসরকারীভাবে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে সংক্রমণ রোধে। তারপরেও উদাসীন হয়ে বাড়িয়ে ফেলছি সংত্রমণ। প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরী হচ্ছে সংক্রমণের।

কোন দিকে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব.......

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য, চট্টগ্রামের একটি পেট্ট্রোল পাম্পের কর্মী সাহাব উদ্দিন(৫৫) শরীরের জ্বর,ব্যাথা নিয়ে বাড়ীতে এসেছিলেন স্বজনদের সহযোগীতা পাবার আশায়। বাড়ীতে আসামাত্র তাকে একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে স্ত্রী সন্তানরা। খাবার, চিকিৎসা তো দুরের কথা একটু পানিও তাকে খেতে দেয়নি স্ত্রী,সন্তানরা।

অপর একটি জায়গায় স্বামী-স্ত্রী দুজনে ভিন্ন গার্মেন্টেসে চাকুরী করে তারা করোনা পজিটিভ নিয়ে বাড়ীতে আসে তাদেরকে বাড়ীতে উঠতে দেয়নি স্বজনরা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও কোন দায়িত্ব পালন করেননি। পরে অন্য ইউনিয়নে চাচা শশুড়ের পরিত্যক্ত খামারে তারা আশ্রয় নেয়।
এছাড়া বৃদ্ধা মাকে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে সন্তানরা। যা ইতোমধ্যে অনেকেই জেনে গেছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেখে অনেকটা হতবাক হয়েছি। ভাবছি বাঙ্গালীর চিরাচরিত ধারাকি পাল্টে যাচ্ছে? বদলাতে হবে আমাদের,বদলাতে হবে চরিত্র,বদলাতে হবে অভ্যাস। তবে এমন বদলাতে কে বলেছে? এমন বদলানো যে নিজের ধ্বংস বয়ে আনে। মৃত্যুভয় সবার আছে, তবে মনুষত্ব বিষর্যন দিয়ে নয়। করোনা আমাদের কি শিক্ষা দিচ্ছে? খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করি, ভালো কাজের অভ্যাস করি। সবাই মিলে দেশ গড়ি। তৈরী করি আগামী প্রজন্মের জন্য বাস যোগ্য পৃথিবী।

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল
সম্পাদক,বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোর ডট কম
সভাপতি,কচুয়া প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত