ইপিজেডে শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগে মেইন গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ  

মোংলা ইপিজেডে শ্রমিক ছাটাইয়ের ঘটনায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাংচুর, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ আটক-৬

মাসুদ রানা,মোংলা 

আপডেট : ০৭:৫৯ পিএম, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪ | ২১৮

মোংলা ইপিজেড এ শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগে মালিক-শ্রমিক মধ্যে বাক-বিতান্ডার এক পর্যায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ভিআইপি ফ্যাক্টরী থেকে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক ছাটাইয়ের ঘোষনা দিলে এমন পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়। প্রখম দিকে শ্রমিকরা একটু শান্ত থাকলেও দুপুরের দিকে শুরু হয় ভাংচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও প্রশাসনের সদস্যরা আহত হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ। মালিক পক্ষ বলছে, কোম্পানী তাদের তৈরীকৃত পন্য বিদেশে রপ্তানী করতে না পেরে বিপাকে পরে। তাই কিছু শ্রমিক ছাটাইয়ের ঘোষনা দিয়ে শ্রমিকরা নেয্য পাওয়ানা পাওয়ার পরেও অহেতুক বিআইপি প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস পুলিশ প্রশাসনের।


ঘটনা স্থলে গিয়ে জানা যায়, মোংলা ইপিজেডে দেশি-বিদেশি ৩৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভিআইপির কোম্পানীর ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসকল প্রতিষ্ঠানের ভিআইপি লাকেজ, ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ টলি সহ বেশ কয়েকটি পন্য তৈরী করা হয় এসকল কারখানায়। গত তিন মাস যাবত কোম্পানী অবস্থা খুবই খারাপ, তৈরীকৃত পন্যগুলো বিদেশে রপ্তানী করতে সমস্যা হাচ্ছে, তাই বেপজা সাথে কথা বলে কিছু শ্রমিক ছাটাইয়ের জন্য ঘোষনা দেয়া হয় বলে জানায় মালিক পক্ষ।


শ্রমিকরা জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ভিআইপি কোম্পানীর কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা প্রায় দুই হাজার শ্রমিককে ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রথমে কাগজে ম্বাক্ষর নেয়। পরে কিছুক্ষন পর পুর্ব ঘোষনা ছাড়াই তাদের কারখানা থেকে চলে যেতে বলেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। পরে ছাটাইকৃত শ্রমিকরা একে একে ইপিজেডের মেইন গেটের সামনে এসে বিক্ষোপ করতে থাকে। খবর পেয়ে মোংলা ইপিজেড নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম ছিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাবিবুর রহমান সহ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার ও বেপজার নিরাপত্তা কর্মীরা লোকজন পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের কটোন করে রাখে যাতে ইপিজেডের মধ্যে কোন পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে। একই সাথে শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে সমজোতার চেষ্টা করে। প্রথম পর্যায় পরিস্থিতি মান্ত থাকলেও দুপুর দেড়টার দিকে মালিক-শ্রমিক উভয়ের মধ্যে বাক-বিতান্ডায় জড়িয়ে পরে। এক পর্যায় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য ফাকা গুলী ছোরে প্রশাসনের সদস্যরা। শুরু হয় উভয় পডক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একে অপারের দিকে ইট-পাটকেল ছুরে মারা হয়। এসময় বেপজার নিরাপত্তাকর্মীদের অফিস ভাংচুর চালায় শ্রমিকরা বলে অভিযোগ বেপজা কর্তৃপক্ষ ও ভিআইপি মালিক পক্ষের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ফাকাগুলী ছুরে ইপিজেড এলাকা থেকে শ্রমিকদের বের করে দেয়া হয়। এসময় কয়েকজন শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আহত হয়। ইপিজেডের পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অন্যান্য চলমান প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার সার্থে ৬ প্লাটন পুলিশ মোতায়ন করা হয়, সাথে আনসার ও বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরাও। বিকাল ৪টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় এবং ইপিজেডের অফিস ভাংচুর ও বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে আটক করা হয় ৬ শ্রমিককে। তাদের মোংলা থানায় রাখা হয়েছে। ঘটনার পর পরই ইপিজেড এলাকায় থমথমে অবস্থা রিবাজ করছে। আতংক ছড়িয়ে পরছে ইপিজেডে কর্মরত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাঝেও।

তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, ভিআইপি কোম্পানী কর্মকর্তারা যখনই একজন শ্রমিকরে এক বছরের কাছাকাছী অর্থাৎ স্থায়ী হওয়ার সময় হয়, তখনই কোন না কোন অযুহাদ দেখিয়ে জোর পুর্বক ছাটাই করে দেয়। এছাড়া সরকারী নিয়োমানুযায়ী কোন শ্রমিককে ছাটাই করতে হলে ৩ মাস আগে ঘোষনা দেয়ার কথা থাকলেও তা না করে হঠাৎ কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা শ্রমিক হয়ে কোন স্থানেই সুষ্ঠ বিচার পাইনা। বর্তমানে রমজান মাস চলছে, এছাড়া সামনে পবিত্র ঈদুল ফেতর। এই মুহুর্তে পুর্ব ঘোষনা ছাড়াই নেয্য পাওনা না দিয়ে আমাদের ছাটাই করা হয়েছে।

মোংলা ইপিজেড ভিআইপি কোম্পানীর (এইচ আর এডমিন) মানবসম্পদ বিভাগের বাংলাদেশের প্রধান -মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মোংরা ইপিজেডে ভিআইপির বর্তমানে রপ্তানীকৃত পন্য বিদেশে না যাওয়ায় কোম্পানী ব্যাপক লোকসানের মুখে পরেছে। তাই বেপজা সহ সকলের সাথে আলোচনা করে কিছু শ্রমিককে সকল নিয়োম মেনে বেতন-বোনাস সহ পাওনাদী বুঝিয়ে দিয়ে এবং অফিসিয়াল ভাবে ঘোষনা দিয়ে ছাটাই করা হয়েছে। যে সকল শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে তাদের সকলের ব্যাংক একাউন্টে তাদের সকল পাওনাদী দিয়ে দেয়া হয়েছে। তার পরেও কিছু শ্রমিক অনৗতিক ভাবে মিথ্যা দাবী তুলে পরিস্তিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে। কোম্পানী তৈরীকৃত পন্য রপ্তানী না হওয়ায় কোম্পানীর সাথে শ্রমিকদের পাওনাদি বুঝে দিয়ে ছাটাই করা হয়েছে। আমরা যা কিছু করেছি শ্রমিক ও মারিকের সার্তেই করেছি। আবার যখন শ্রমিক নেয়া হবে, এ ছাটাইকৃত শ্রমিকদের আগে নেয়া হবে বরেও জানায় কোম্পানীর এ কর্মকর্তা।

বাগেরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান বলেন, মোংলা ইপিজেড শ্রমকি ছাটাইয়ের নাম করে কিছু শ্রমিক নামধারী লোক ইপিজেড এলাকার মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও অফিস ভাংচুর করে পনিস্থিতি অমান্ত সৃষ্টির কারার কারনে তাদের বুঝানোর চেষ্টা র্ব্যাথ হয়ে বের করে দেয়া হয়েছে এবং এর সাথে জড়িত থাকা প্রমানিত হওয়ায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে ইপিজেড এর পক্ষ থেকে মামলা প্রস্তুতি চলছে বলেও জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।


মোংলা ইপিজেডে ভিআইপি কোম্পানীর ৭টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। গত বছরের একই সময় অহেতুক প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ছাটাই করেছিল এই ভি আই পি নামের প্রতিষ্ঠান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত