সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে

জঙ্গি সন্দেহে আটক আমিনুলের বাড়ি সাতক্ষীরার তালায়

তালা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৭:২৬ পিএম, রোববার, ২২ নভেম্বর ২০২০ | ৭১৯

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য সন্দেহে শুক্রবার র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার জঙ্গিদের একজন আমিনুল ইসলাম ওরফে শান্ত’র (২২) এর বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দক্ষিণ নলতা গ্রামে। মাত্র ১ বছর বয়সে মায়ের সাথে (বাবার সংসার চ্যুত হয়ে) মামার বাড়ি নলতায় বসবাস তার।

বিয়ে করেছেন গত বছর ২২ জানুয়ারী একই এলাকার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া জনৈকা কিশোরীকে ভালবেসে। মামার বাড়ীর অমতে বিয়ে করায় মায়ের ক্রয়কৃত জমিতে ঘর বেঁধে শ্বশুরালয়ের মতাদর্শে সেখানেই বসবাস করেন। স্থানীয় পুলিশের দাবি, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। পরিবার ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে আমিনুল কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও সর্বশেষ র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সন্দেহে গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীকেও ভাবিয়ে তুলেছে। আমিনুল এলাকায় প্রচার করতেন যে, তিনি খুলনায় ফুড পান্ডে নামে একটি অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানতে চাকুরী করতেন।


পিত্রালয়ে বসবাসরত আমিনুলের মা রোকসানয়ারা বিথি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বহু বিবাহের হোতা অমিনুল ইসলাম শান্তের পিতা বজলুর রহমান । বজলুর রহমানকে বিয়ে করে তিনি ঠকেছিলেন। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিজেরামপুর গ্রামের বাসিন্দা বজলু আনসার ব্যাটেলিয়ানের সদস্য হিসেবে কর্মরত অবস্থায় সাতক্ষীরা তালা থানায় পোস্টিং নিলে ১৯৯৯ সালে তার সাথে পরিচয় হয় তার। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদের মধ্যস্থতায় বিয়ে হয় তাদের। এরপর বজলুর গ্রামের বাড়ি বিজেরামপুরে প্রায় এক বছরের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিতর পর আকষ্মিক বজলুর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আগমন ঘটে ঐ বাড়িতে। এরপর রাগে,দুঃখে, মনো কষ্টে গর্ভাবস্থায় অমিনুলের মা বিথী চলে আসেন তালার পিত্রালয়ে। এরপর বাবার সংসারে বহুকষ্ঠে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেন। আমিনুলকে প্রথমে স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়া-লেখা করান। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে তালা বিদে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে ভর্তি হন তালা সরকারী কলেজে। সেখান থেকে এইচ এস সি পাশ করে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। সর্বশেষ সেখানে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষেও ছাত্র ছিলেন। আমিনুলের মায়ের দাবি, বিয়ের পর কিছুদিন পর সে খুলনায় চাকুরিতে যান।


এলাকাবাসীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এলাকায় থাকাকালীণ বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন জনকে ইমাম মাহমুদের ঐক্যের ডাক নামে একটি বই পড়তে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দাওয়াত দিতেন অমিনুল উসলাম শান্ত।


মায়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী আমিনুল সর্বশেষ ৫/৭ দিন আগে বাড়িতে এসে ১৯ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক দেড় টার দিকে বাড়ি থেকে চাকুরীর উদ্দেশ্যে খুলনায় চলে যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মোবাইলে কথা হলে ব্যস্ত আছে বলে ফোন রেখে দেন। এরপর সর্বশেষ শুক্রবার মিডিয়ার মাধ্যমে তার গ্রেফতারের খবর পান।


আমিনুলের স্ত্রী হাবিবা খাতুন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, তার সাথে বিয়ের পর থেকে অস্বাভাবিক কোন আচরণ তাকে বিচলিত করেনি। তার স্বামী খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার জনৈক আশরাফুল ইসলামের মাধ্যমে ফুডপান্ডে অনলাই মার্কেটিং কোম্পানীতে চাকুরী নেন। তার ধারণা, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে আমিনুল গ্রেফতার হলে তারও গ্রেফতার হওয়ার কথা। তবে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আশরাফুলের গ্রেফতার না হওয়াটাকেও মেনে নিতে পারছেননা তিনি। কেননা, তার সাথেই ছিল আমিনুলের দহরম মহরম সম্পর্ক।



এদিকে তথ্যানুসন্ধানে তার নিজ এলাকায় বিভিন্ন সময় বিলিকৃত নানা জিহাদি বই, লিফলেটসহ বিভিন্ন বই চলে এসেছে সাংবাদিকদের হাতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই তার সম্পর্কে জঙ্গি সম্পৃক্ততার চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এলাকার অনেকেই রিজিয়ন ভিত্তিক নানা অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। আটক আমিনুলকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসতে পারে নানা অজানা চমকপ্রদ তথ্য এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকেই।


তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল রোববার দুপুরে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আমিনুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা নেই। পরিবারের ভাষ্যমতে সে খুলনায় একটি কোম্পানিতে চাকুরী করতো। তবে জঙ্গী সন্দেহে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পরে তার ব্যাপারে ব্যাপক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত