এনজিও’র বিরুদ্ধে হতদরিদ্র ভিজিডি সদস্যদের

শরণখোলায় সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

শরনখোলা সংবাদদাতা

আপডেট : ০৩:২৮ পিএম, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২৫৫৭

সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

শরণখোলায় “বিভা” নামের একটি এনজিওর বিরুদ্ধে ‘ভিজিডি’ সুবিধাভোগী হতদরিদ্র সদস্যদের সঞ্চয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে গত রবিবার সদস্যদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে সঞ্চয় বইতে ২০০ টাকা উঠালে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এসময় সদস্যরা প্রতিবাদ জানালে তাদের সঙ্গে ওই এনজিও কর্মীদের তুমুল হট্টোগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে এনজিও কর্মীরা নিজেদের দোষ ঢাকতে সকল সদস্য’র কাছ থেকে অডিটের নামে সঞ্চয় বই সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভা নামের ওই এনজিওটি শরণখোলা উপজেলায় ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। (২০১৭-১৮ সাল) এই দুই বছর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে দুই হাজার ৮০৫ জন সুবিধাভোগীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ এবং প্রতিমাসে ওই সদস্যদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় আদায় করবে এনজিওটি। ওই সঞ্চয়ের টাকা দুই বছরে লভ্যাংশসহ সদ্যদের ফেরত দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই কর্মসূচী তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, মহিলা অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে ভিজিডি কর্মসূচী বাস্তবায়নকারী এনজিও ‘বিভা’ হতদরিদ্র নারীদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করছে। রবিবার সাউথখালী ইউনিয়নের ৬৬১ জন সদস্যকে পরিষদে বসে চাল বিতরণ করা হয়। এসম সদস্যদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে সঞ্চয় উত্তোলন করে এনজিও’র সঞ্চয় বইতে ২০০ টাকা লেখা হয়। এসময় এক সদস্য তা দেখতে পেয়ে বিষয়টি সকল সদস্যকে জানালে হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়।

ভিজিডি সুবিধাভোগী ওই ইউনিয়নের উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের লাখী খানম, গাবতলা গ্রামের শিউলী বেগম, খুড়িয়াখালী গ্রামের আসমা বেগম, সোনাতলা গ্রামের কোহিনুর বেগমসহ অনেকই অভিযোগ করে বলেন, চাল নেওয়ার সময় এনজিও কর্মকর্তা আকাশ শিকারী ও অন্য কর্মীরা আমাদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা সঞ্চয় নেয়। কিন্তু বইতে উঠায় ২০০ টাকা। এভাবে ৮১টি বইতে ২০০ টাকা করে উঠানো হয়। বিষয়টি প্রথমে খুড়িয়াখালী গ্রামের সদস্য ফজিলা বেগমের নজরে পড়লে তিনি সবাইকে জানান। একপর্যায়ে সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ জানালে তাদের ভূল হয়েছে বলে এনজিও কর্মীরা তড়িঘড়ি করে সব সদস্যের কাছ থেকে সঞ্চয় বই নিয়ে যায়। পরবর্তী মাসে অফিসিয়াল অডিট শেষে সবাইকে বই ফেরৎ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। আবার অনেক সদস্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ নাম জানতে পারলে মহিলা অধিদপ্তর ও এনজিও তাদের নাম কেটে দিবে এই ভয়ে। তাছাড়া, মহিলা অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওই এনজিও’র সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। একারণে এনজিওটি জালিয়াতির সাহস পাচ্ছে। সঠিক তদন্ত হলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নেই এভাবে জালিয়াতির প্রমান পাওয়া যাবে বলে অনেকই অভিযোগ করেছেন।

বিভা’র শরণখোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকাশ শিকারী বলেন, কর্মীরা ভুলে ৪-৫টি বইতে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা লিখে ফেলে। পরে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই দাবি করে বলেন, এনজিও’র সঞ্চয় বইতে ৪০০ টাকা উঠানো হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি ভিজিডি কার্ডে ভুলক্রমে ২০০ টাকা লেখা হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে পরে আমি পরিষদে গিয়ে তা সংশোধন করে দিই।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কয়েকটি বইতে টাকা কম লেখার অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি বসে সমাধান করা হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) লিংকন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানা নেই, তবে খোাঁজখবর নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত