অভিমানি বউ

সিকদার মনজিলুর রহমান

আপডেট : ১২:২০ এএম, সোমবার, ৭ মার্চ ২০২২ | ১৪৪৮

রাতের শিফটে কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছি।

হঠাৎ তুষার ঝড়ে গাড়ি চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ডিসেম্বরে আটলান্টায় সাধারণত এমন তুষার ঝড় হয় না। শরীর-মন ক্লান্ত। বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছিল না। এ পাশ-ও পাশ করছিলাম। এ সময়ে পাশে এসে মোলায়েম গলায় আমার স্ত্রী রাণি জিজ্ঞেস করল, তুমি কী ঘুমিয়ে পড়েছ? কপালটা টিপে দেব? আরাম লাগবে।”

আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই সে তার কোমল অঙুলি দিয়ে আমার কপাল টিপতে শুরু করল। প্রশান্তিতে চোখ বুজে এলো।

হঠাৎ শোনা গেল,“তোমাকে একটা কথা বলি, রাগ করবে না তো সোনা !

ঘুমের আবেশ পলকে উধাও। জিজ্ঞেস করলাম “কী?”

লাজুক মুখে আমার রাজ্যের রাণি বলল, “অনলাইনে একটা ভ্যানিটি ব্যাগের অর্ডার দিয়েছি।

আমার উৎকণ্ঠার অবসান হল। বললাম, “ভালই করেছ।

“ইন্টারনেটে দেখে পছন্দ হয়ে গেল আর অর্ডার করে দিলাম। আগামি সপ্তায় ইউপিএস ডেলিভারি দিবে। তোমার ক্রেডিট কার্ড চার্জ করে দিয়েছি।”

“ কত?”

টাকার অংক শুনে আমার মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। মেজাজ খাট্টা হয়ে গেল। গলা তুলে বললাম, “ একটা ভ্যানিটি ব্যাগ কেনার জন্য এত টাকা ?

মাইকেল করের ভ্যানিটি ব্যাগ । খুব নামি কোম্পানী । সচারাচর এমন সেল থাকে না।

সে যা-ই হোক । একটি ব্যাগের পিছনে এত টাকা ? টাকা কী আকাশ থেকে পড়ে ? এমন আমাপা খরচা করার মানুষ আমি নই,পরিস্কার বলে দিলাম।”

গলার আওয়াজটা এতটাই উঁচু হয়ে গিয়েছিল যে পাশের রুমে শুয়ে থাকা আমার ছেলে ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল। কপালে আমার স্ত্রীর কোমল আঙুল আর নেই। আমি চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছি। হঠাৎ কান্নার আওয়াজে আমার হৃদয় চুরমার হয়ে গেল। রাণি কাঁদছে। ফুঁপিয়ে কান্না। আমি সহ্য করতে পারলাম না। তার কাঁধে আমার ডান হাত রাখলাম। সে হাত সরিয়ে দিল। কান্না দ্বিগুণ হল। তাকে দু’হাত দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। কী বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।

সে কান্নাভেজা গলায় বলতে লাগল, “আমি আর কখনও তোমার কাছে কিছু চাইব না। ব্যাগের অর্ডার আমি কালই ক্যানসেল করে দেব। আমার জন্য তোমাকে আর টাকা খরচ করতে হবে না।”

মনে মনে বললাম, ‘তুমি টাকা খরচ না করলে আমি বেঁচে যাব। তাজমহল না পারি,বাড়ির মর্টগেজটা তাড়াতাড়ি পরিশোধ করে ফেলব।’

মুখে বললাম, “ নানান ঝামেলায় মাথা ঠিক নেই। আমাকে এ বারের মতো ক্ষমা করো। আমি তোমাকে আর এ ধরনের কথা বলব না। তুমি ব্যাগের অর্ডার ক্যানসেল করো না।”

সে কোনও উত্তর দিল না। কান্নার শব্দও আর নেই। আমার পাশে শুয়ে পড়ল। আমি তাকে কাছে টেনে নিলাম। বাঁধা দিল না।

সত্যি তার রুচির প্রশংসা করতে হয়। ব্যাগ এত সুন্দর হতে পারে, আমার জানা ছিল না। কী মোলায়েম আর নরম। মনে হচ্ছে সুন্দরবনের চিত্রা হরিণের চামড়া দিয়ে গড়া । এ সব ব্যাগ ব্যবহার না করে শো কেসে সাজিয়েও রেখে দেওয়া যায়। রাণি ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে লিভিং রুমে হাঁটতে লাগল। আর মুখে খুশির ঝিলিক প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগছে দেখতে?”

তার মিষ্টি মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বললাম, খুব ভাল লাগছে। সে খুব খুশি হল। ব্যাগ বাবাজির স্থান হল ক্লোজেটের উপরের তাকে। তিন প্রস্থ খবরের কাগজ জড়িয়ে পলিথিনের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে দিল । আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ ওটা ব্যবহার করবে না?”

হেসে উত্তর দিল , “করব। বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে ।”

বিশেষ অনুষ্ঠান এলো প্রায় মাস চারেক পর। তার এক বান্ধবির বিবাহ বার্ষিকীতে সস্ত্রীক নেমন্তন্ন।

রাণি নির্দিষ্ট দিনে সময়ের আগেই সাজগোজ কমপ্লিট করে শখের ব্যাগ নেবার জন্য ক্লোজেটের দরজা টেনে খুলল। কিছু ক্ষণ পর সেখান থেকে আর্তনাদ শোনা গেল। আমি ভয় পেয়ে ছুটে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখলাম, আমার সুসজ্জিতা বৌ দু’হাতে ব্যাগের একটা হাতল ধরে ভাস্কর্যের মত দাঁড়িয়ে আছে। দেখলাম,ব্যাগের দুটো হাতলের একটি ব্যাগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন । কোন ফাঁকে বিড়ালের বাচ্চা সেখানে উঠে এই কর্মটি করে রেখেছে । পাশের বাড়ির একটি বিড়াল বাচ্চা প্রসবের পূর্বে আমাদের বাড়িতে এসে ঠাঁই নেয়। সে বিড়ালটি পাঁচ পাঁচটি বাচ্চা দিয়েছ। কতবার বলেছি এগুলোকে বিদায় করো। কিছুতেই রাজী করানো যায়নি ।

আমি তখন বললাম, তোমাকে কতবার বলেছি, এই আপদগুলোকে কোন এ্যানিমেল শেল্টারে দিয়ে আস । কোন কথায়ই কান দাও নি । এখন ঠেলা সামলাও ।

আত্মপক্ষ সমর্থনে বলল, “শেল্টারে দিলে ওগুলো কী এতদিন বেঁচে থাকত ?”

“ কিন্তু আমাদের তো এমন ক্ষতি হতো না। এত শখের ব্যাগটা আমি কাউকে দেখাতেই পারলাম না। এতগুলো টাকা আমার পানিতে গেল।”

আমিও নিজেকে সামলাতে পারলাম না, বললাম,“টাকাটা তোমার না আমার? তোমার ব্যাগের টাকায় আমি একটি ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারতাম । তোমার মতো বেহিসেবি মেয়ের জন্য আমার জীবনটা জ্বলে গেল।”

“কী বললে তুমি? আমি বেহিসেবি ?”

“ আমি এক কথা দুইবার বলার মানুষ না। তোমার তো কোটিপতি ব্যবসায়ি দেখে বিয়ে করা উচিত ছিল। তোমার আনলিমিটেড শখ পূরণ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি আর একটা পয়সাও খরচ করতে পারব না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। এ যে দেখছি বোনও হয়।’’

“একদম বাজে কথা বলবে না। আমার শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে পারবে না তো বিয়ে করেছিলে কেন? আটলান্টায় আসার আগে তো ফোন করে করে অস্থির করে দিয়েছিলে। তখন বুঝতে পারিনি তুমি কী জিনিস ? ভাল করে শুনে রাখো, এই ব্যাগ আমি আবার কিনব। এবং সেই দাম তোমাকেই মেটাতে হবে।”

কঠিন হলাম, “ বললাম অসম্ভব!

“আমি কালই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তোমার সঙ্গে আর থাকা যাবে না। আমি ডিভোর্স করব। তোমার সঙ্গে আমার কোর্টেই দেখা হবে।

একটি ব্যাগের জন্য তুমি ডিভোর্স করবে ?

হ্যাঁ,তাই করবো ।

“কাল কেন? আজই চলে যাও। দেখি তোমায় কে ঠেকায় !

কোনও উত্তর না দিয়ে রাণি ঘরের মধ্যে চলে গেল। তার বান্ধবির বিবাহ বার্ষিকীর নেমন্ত্রণ আর রক্ষা করা হলো না। অগত্যা কিছুক্ষণ পরে আমি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ।

রাতে ফিরে বিছানায় শুয়ে অনুভব করলাম, আমি আর রাণি দুই ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম,রাণি বিছানায় নেই। ভাবলাম রান্নাঘরে। কিংবা কাজে গেছে। কাজের জায়গায় ফোন করলাম জানতে পারলাম কাজেও যায়নি । কোথাও খুঁজে পেলাম না। গেল কই ? ছেলেও নেই। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে রাণিকে ফোন করলাম। সে ফোন ধরেই বলল,“আমি আটলান্টা এয়ারপোর্টে । লস অ্যাঞ্জেলস যাচ্ছি। সাথে আমার ছেলেকেও নিয়ে যাচ্ছি। আর ফিরব না।”

বলেই ফোনটা কেটে দিল । আমি আবারও কয়েক বার ফোন করলাম। একবারও ধরল না। জানতে তো পেরেছি লস অ্যাঞ্জেলস যাচ্ছে । সেখানে তার দুই ভাই থাকে । তাই আর মাথা ঘামালাম না। ক’দিন ভাই বাড়ি বেড়িয়ে আসুক। অভিমান ভাঙলে আবার ফিরে আসবে ।

দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত । রাণির দেখা নেই। ফোন করলেও কোন রেসপন্স নেই। শুধু রিংটোন বেজে যায়। অবশ্য একদিন তার ছোট ভাইয়ের বউ ফোন ধরে বলেছিল, দুলাভাই,টেনশন করেন না। আপা আমাদের এখানেই আছে অভিমান পড়লে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আটলান্টায় পাঠিয়ে দিব।

জেদ আমারও কম নয়। ফোন করা বন্ধ করে দিলাম । দেখি কতদিন থাকতে পার ?

এ ব্যাপারে আমার বন্ধু মোহনের সঙ্গে কথা বললাম। সে উকিল মানুষ । আমার কেস হিস্ট্রি শুনে সে বলল, “ডিভোর্স ছাড়া উপায় নেই। ওই রকম দজ্জাল মহিলার সঙ্গে ঘর করার কোনও মানেই হয় না,” বলে মিনিট খানেক কী যেন ভাবল। তার পর বলল, “তোর পায়েলিকে মনে আছে? আমরা পিচট্রিতে একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম ? আলম সাহেবের মেয়ে । তারা এখন বাড়ি কিনে লরেন্সভিলে থাকে । ”

বললাম, “কেন মনে থাকবে না। শ্যাম বর্ণা রোগাটে চেহারা। চোখ দুটো খুব সুন্দর।”

“পায়েলি আর রোগা নেই। আর গায়ের রংও ফর্সা হয়ে গিয়েছে। দেখতেও আকর্ষনীয়া হয়েছে।”

“হঠাৎ তার কথা কেন?”

“ মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল । সম্প্রতি তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে । আমারই ক্লায়েন্ট ছিল । বিয়ের পর মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে ডিভোর্স নিতে বাধ্য হল।”

“কেন? পায়েলি কী করবে?”

“তোর ভাল বন্ধু হবে। তোর সুখ দুঃখ ভাগ করে নেবে।” আমি তার বাবার সাথে কথা বলব ।

আমি মোহনের কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। চুপ করে থাকলাম।

মোহন বলল, “সামনের রবিবার আমার বাড়িতে তোর নেমন্তন্ন। আমার বাড়িতে ছোটখাট একটা পার্টি আছে । ওই দিন পায়েলির মা-বাবার সাথে পায়েলিও আসবে । তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব ।”

বললাম, “ঠিক আছে। আমি আসব।”

বাড়ি ফিরে এলাম। বেডরুমে ঢুকতেই হু হু করে উঠল বুকটা। রাণির কথা মনে পড়ল। মন শক্ত করলাম। তাকে ভুলতেই হবে। এ্যানি হাউ।

রবিবার সকালে পৌঁছে গেলাম মোহনের বাড়ি। পায়েলির চেহারা সত্যি পাল্টে গিয়েছে। অনেক আকর্ষক হয়েছে। দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। মোহন জানাল,পার্টির রান্না পায়েলিই রেঁধেছে। মেয়েটির রান্নার হাত বড়ই পাকা। এত সুন্দর রান্না রাণিও রাঁধতে পারবে না।

পায়েলি ক্রমশ আমার মনের কাছাকাছি চলে এল। ফোনে ‘হ্যালো, কেমন আছেন’ দিয়ে শুরু হল। তার পর পালতোলা নৌকো নিয়ে মাঝসমুদ্রে পাড়ি দিলাম দু’জনে। সফর যেন শেষ হয় না। ম্যাসেঞ্জার , হোয়াটসএ্যাপে চ্যাট ,ভিডিও কল করে দু’জনে সীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করলাম। মোহন ডিভোর্সের মামলার তোড়জোড় করতে লাগল।

একদিন কথায় কথায় মোহন বলল, “কদ্দিন আর হাত পুড়িয়ে খাবি ? পায়েলিকে তোর বাড়িতে নিয়ে আয়। লিভ টুগেদারে কোনও অসুবিধে নেই। তা ছাড়া ডিভোর্স হয়ে গেলে তো বিয়ে হবেই।”

অবাক হয়ে বললাম, “লিভ টুগেদার! লোকে কী বলবে?”

“লোকের কথায় গুল্লি মার। তুই রাজি থাকলে আমি পায়েলির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারি। এ্যামেরিকায় লিভ টুগেদার এখন ডালভাত।”

মোহন সার্টিফিকেট দিলেও আমি মেনে নিতে পারলাম না। তাই পায়েলি আর আমার সম্পর্ক ফোনেই সীমাবদ্ধ রাখলাম। ভবিষ্যতে যা ঘটার ঘটবে। তখন দেখা যাবে।

বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না। পর দিন সকালে ঘুম ভাঙল ডোর বেলের আওয়াজে। ঘুম থেকে উঠে লুঙ্গি গুটাতে গুটাতে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হু ইজ দেয়ার ? ছেলের গলা ভেসে এল, “বাবা, দরজা খোলো। আমি আর মা দরজায়।”

দরজা খুলে দিতেই মা ও ছেলে ঘরে ঢুকল। রাণির চেহারা আগের থেকে স্লিম। আমার দিকে এক বারও পিছন ফিরে দেখল না।

তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। রাণির হাতের ছোঁয়ায় সারা বাড়ির হাল ফিরেছে। যেখানে যে জিনিস থাকার কথা সেটা সেখানেই আছে। এই তিন সপ্তায় রাণি আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি। অথচ দিব্যি খাবারদাবার পাচ্ছি সময়ে সময়ে। পাচ্ছি না শুধু রাণির মুখের ভাষা আর মিষ্টি হাসি। রাণির সারা মুখ জুড়ে শুধু বর্ষার কালো মেঘ। যে কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। রাতের বিছানায় দু’জনে দু’প্রান্তে। মাঝে কোল বালিশ।

মোহন সব শুনে বলল,“তুই রাণিকে বাড়ি থেকে বার করে দে। যে বৌ ঠুনকো ঘটনায় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, তার সঙ্গে থাকা আর পরস্ত্রীর সঙ্গে থাকা একই ব্যাপার।”

মোহনের উপমা ভাল লাগল না। রাণি আমার কাবিন করা বউ। এক কথায় কি ছাড়া যায়? পায়েলিকে ফোন করে পরামর্শ চাইলাম। সে কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল, “ইউ আর এ্য চিট। আমার ভালবাসার কোনও মূল্য নেই তোমার কাছে। আমাকে আর ডিস্টার্ব করবে না।”

আমি পায়েলির কাছে বন্ধুহীন হয়ে গেলাম। আর রাণি আমার কাছে থেকেও নেই। বুকের মধ্যে যন্ত্রণা অনুভব করলাম। কিন্তু যত বার রাণির সামনাসামনি হওয়ার চেষ্টা করি, তত বারই অদৃশ্য বাঁধা আমাকে আটকে দেয়।

পেরিয়ে গেল আরও সাত দিন।

বিছানায় শুয়ে আছি। চোখে ঘুম নেই। পুরনো দিনের সুখস্মৃতি মনে পড়ছে। রাণির দিকে তাকালাম। নাইট বাল্বের হালকা আলোয় দেখলাম সে ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ আমার দু’চোখ ছলছলিয়ে উঠলো। কাঁদলে মানুষের মন হালকা হয়। যন্ত্রণা কমে। কিন্তু আমার যন্ত্রণা কমল না।

উঠে বসলাম। বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গেলাম রাণির কাছে। রাণি কোন কিছু টের পাওয়ার আগেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলে বললাম, “আমি ভুল করেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো প্রিয়তমা।”

আরও কী কী বললাম জানি না। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রুজলও রাণির গায়ে পড়ল। রাণিও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। মিনিট দুয়েক কান্নার পর আমি কিছু বলার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার গতি বাড়াল। আমি নতুন করে রাণিকে আবিষ্কার করলাম।

বিছানায় পাশাপাশি দু’জনে। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাণি বলল, “ কী আছে ওই ডিভোর্সির? তোমার বিয়ে করার এত শখ? ছেলে-বৌকে পথে বসাতে চাও? তোমার লজ্জা করে না? ওই মেয়েটার পিছনে কত টাকা খরচা করেছ? আমার ব্যাগের চেয়ে কম টাকায় হয়ে গিয়েছে তো সব? আর ডিভোর্স পাওয়াবে কে? তোমার প্রাণের বন্ধু মোহন উকিল? সে-ই তো তোমার আর ঐ মাগীর নামে হাজার হাজার কেচ্ছা কেলেঙ্কারি শোনাত আমাকে ফোন করে, যাতে আমি আর না ফিরি। তোমাকে ডিভোর্স পাওয়াতে ওর সুবিধে হয়। আমাকে আর কী বোঝাবে, তোমার দৌড় আমি জানি না! আমি হঠাৎ ফিরে আসায় সবার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে গেল!

আমি কোনও উত্তর দিলাম না। আজ আমি শুধু শ্রোতা ।

রাণিকে বললাম,“কালই তুমি অ্যামাজনে নতুন ব্যাগের অর্ডার দিয়ে দেবে । বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড তার হাতে দিয়ে বললাম, এই নাও কার্ড। এটা চার্জ করো।

উত্তরে সে কিছু বলল না। ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের কাছে এসে ভাজ খেল ।

বিদ্রঃ গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক । এটির সাথে জাতি,ধর্ম বা কোন ব্যক্তির মিল নেই । যদি কোন মিল পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণভাবে কাকতালীয় ।

লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী । কচুয়া, বাগেরহাটের অধিবাসী ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত