বৃষ্টির জন্য মোংলায় বিশেষ নামাজ আদায়, ৩ ঘন্টা পর বৃস্টি শুরু

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৮:৪৫ পিএম, বুধবার, ১৫ জুন ২০২২ | ৩৫৬

লবণ অধ্যুষিত মোংলা বন্দরের উপকুলীয় এলাকায় বৃষ্টি নেই, চলছে প্রচন্ড তাপদাহ, শুকিয়ে গেছে ডোবা ও পুকুরের পানি। প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের সুপেয় মিষ্টি পানির এক মাত্র স্থান পৌর সভার পানির প্রকল্প দুইটি পুকুর, আর সেই প্রকল্পের পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন যাবত। এখন মানুষের জীবন বাচাঁতে এক মাত্র ভরসা আল্লাহর দেয়া রহমতের বৃষ্টির পানি। তাই অনাবৃষ্টি ও পানি স্বল্পতার জন্য বিশেষ সালাতুল ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করা হয়েছে। তবে নামাজ আদায়ের ৩ ঘন্টা পরই আল্লাহর রহমতের বৃস্টিও শুরু হয়েছে মোংলায়।
সুত্রে জানায়, দেশ ব্যাপি চলমান দাবদাহে বৃষ্টি না হওয়ায় মোংলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে জনজীবন। মানুষের মাঝে নেমে আসছে চরম দুর্ভোগ, রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এখানকার সাধারণ মানুষ। উপকুলীয় গ্রামীণ জনপদের পুকুর ও ডোবায় পানির স্থর নেমে যাওয়ায় শুকিয়ে দেখা দিয়েছে মারাত্মক পানি সংকট। এছাড়াও কোথাও কোথাও নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। জৈষ্ঠ পেরিয়ে আষাড়ে পা দিলেও নেই বৃষ্টির দেখা। তাই মানুষ হাহাকার করছে খাবার পানির জন্য।
বৃষ্টি না হওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল, দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। মোংলায় সুপেয় পানির জন্য একমাত্র পানির প্রকল্পের পুকুর দুটিও শুকিয়ে চৌচির। তাই এ অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ও রহমতের বৃষ্টির জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা ইমাম পরিষদের আয়োজনে বিশেষ (সালাতুল ইস্তিস্কার) নামাজ আদায় করেছেন মোংলা উপজেলা বাসী। ১৪ জুন বুধবার সকাল ৮টায় পৌর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে এ নামাজ আদায় করেন উপজেলার ২৬৭টি মসজিদের ইমামসহ প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক ধর্মপ্রান মানুষ।
নামাজ শেষে হাজারো মুসল্লি আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করেন। অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মোংলা উপজেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি, ইমাম ও খতিব মাওঃ মোঃ রেজাউল করিম। এসময় মোংলা পোর্ট পৌর সভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইমাম পরিষদের উপদেষ্টা হাফেজ মাওঃ রুহুল আমিন, ইমাম পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওঃ মোঃ আঃ রহমান, বাজার মসজিদের ইমাম মাওঃ তৈয়েবুর রহমান সহ অন্যান্য ইমামগণ উপস্থিত ছিলেন।
ইমামগণ বলেন, সৌদি আরবে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রতি বছরই একাধিকবার ইসতিসকার নামাজ পড়া হয়। বিশেষ করে যখনই অনাবৃষ্টি প্রচন্ড তাপপ্রবাহ বেড়ে যায় তখনই নামাজে ইসতিসকা আদায় করা হয়। ইসতিসকার সালাত আদায় করা নফল ইবাদত। তবে মহামারি বা দুর্যোগ এলে এই সালাতের গুরুত্ব অনেক বলে জানান তারা। একনিষ্ঠ তাওবা করা অর্থাৎ তাওবাতুন নসুহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করে ২ রাকায়াত সুন্নত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়েছে। এই নামাজে কোনো আজান বা ইকামত নেই। তবে জামায়াতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। তবে নামাজের ৩ ঘন্টা পর শহরের বৃষ্টি শুরু হয়েছে যা আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি।
নামাজের আগে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান সকলের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেন এবং পৌরবাসীর সুপেয় পানির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার দাবি জানান।
ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওঃ রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ পানির জন্য খুব বিপদে আছে। উপকুলীয় এলাকায় প্রচন্ড তাপদাহে দেশের মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা সুন্নত, একেই বলা হয় 'ইস্তিস্কা অর্থাৎ আল্লাহর কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করা।
গত ৭ মে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র ফলে দুই দিন বৃস্টি হলেও অদ্যবদি কোন বৃস্টি দেখা মিলছে না মোংলা উপকুলে। এছাড়া সম্প্রতি খনন করা ৪৫ কোটি টাকা ব্যায় দুটি পানি সরবরাহ প্রকল্প থাকলেও কোন কাজে আসছে না মোংলাবাসীর।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত