শরণখোলার কালিয়ার খালে কালভার্টের অভাবে হাজার পরিবারে দুর্বিসহ অবস্থা

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:২৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ | ৬১৩

শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর থেকে ছোট নলবুনিয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কালিয়ার খালের দুইপারে সহ¯্রাধিক পরিবারের বসবাস। এসব পারিবারে নিত্য ব্যবহার্য পানির একমাত্র উৎস্য এই খালটি। কিন্তু সেই খালের পানির অবস্থা খুবই বেহাল। দুই পাশের গাছগাছালির ঝরাপাতা পঁচে দুর্গন্ধ আর বিবর্ণ পানি গিয়ে ঠেকেছে তলানীতে। যেটুক আছে তাও আবার ঢেকে আছে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন পানা-শ্যাওলায়। এখন পানির হাহাকারে দুর্বিসহ অবস্থা হয়েছে ওইসব পরিবারে।

গ্রামবাসীরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, শরণখোলা সরকারি কলেজ থেকে বাসস্ট্যান্ডের মাঝ বরাবর কালিয়ার খালের মুখে একটি কালভার্টের অভাবে হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শত শত একর ফসলি জমি খিল পড়ে আছে। ধান ওঠার পরে পানির অভাবে সেখানে অন্য কোনো ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষকরা। একটি কালভার্ট নির্মান করে রায়েন্দা খালের সঙ্গে সংযোগ করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এমন দাবিতে রাজৈর, পশ্চিম রাজৈর ও ছোটনলবুনিয়া এই তিন গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিলেও কোনো ফল হয়নি। যার ফলে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

অবশেষে দুর্ভোগের শিকার ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কালিয়ার খালের মুখে বেড়িবাঁধ ফুটো করে সেখানে পাইপ বসানো শুরু করেন। কিন্তু এলাকার কিছু সার্থান্বেষী লোক বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তাদের সমস্যার কথা খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হলে তিনি বদ্ধ পানি নিষ্কাশন এবং পাইপ বসানোয় সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন গ্রামবাসীকে।

রাজৈর গ্রামের চাষী মো. লোকমান মোল্লা (৫৫) ও সাইয়েদ আলী হাওলাদার (৬০) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, রাজৈর গ্রামের কয়েকশ একর জমি আমন ধান ওঠার পরে ফাঁকা পড়ে থাকে। কালিয়ার খাল সচল থাকলে এসব জমিতে ইরি ও বোরো ধানসহ সারাবছরই বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব হতো। পানি সমস্যার কারণে জমি থাকওে চাষীদের বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

গৃহিনী হাজেরা বেগম (৫০) ও গৃহবধু মিস্টি আক্তার (৩০) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পানির রং গাবের কসের মতো হয়ে গেছে। এমন দুর্গন্ধ পানি দিয়ে গোসল করা যায়না। থালা-বাসন, জামা-কাপড় ধোয়া এমনকি আমরা স্বাভাকি কাজকর্মও করতে পারছিনা। গোসল করার পর গা চুলকায়। ছেলেমেয়েদের শরীরে খুজলি-পাচড়া দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর মধ্যে মো. আমজাদ হাওলাদার (৮০), মকবুল হাওলদার (৭৫), আব্দুর রহিম মল্লিক (৪৫), মুজিবর হাওলাদার (৫০), দেলোয়ার হাওলাদার (৪৫), হাসিব বিল্লাহ (৩৫) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, খালের পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। মুখে নেওয়াতো দুরে থাক পায়খানায়ও এ পানি ব্যবহার করা যায়না।

তারা বলেন, একপর্যায় অতিষ্ট হয়ে গ্রাম থেকে আট হাজার টাকা চাঁদা তুলে পাইপ বসানোর কাজ শুরু করি। এতে মোট খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু পাইপ বসাতে গেলে স্থানীয় একটি কুচক্রি মহলের ইন্ধনে বেড়িবাঁধ নির্মান কাজের ঠিকাদারদের খবর দিয়ে আমাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি বাঁধ নির্মান কাজে নিয়োজিত চায়না ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে আগামী রবিবার খালের মুখে পাইপ বসানোর ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, খালের পানি কোথা ও সরতে না পারায় গাছের পাতা পঁচে, শ্যাওলা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এতে গ্রামের মানুষ চরম কষ্ট ভোগ করছে। চায়না ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত খালের মুখে আমার ব্যক্তিগত খরচে পাইপ বসিয়ে জোয়ারের পানি ওঠানামার ব্যবস্থা করা হবে। স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে পরবর্তীতে ওখানে একটি কালভার্ট করারও চেষ্টা চলছে। খালটি সচল হলে একদিকে যেমন পানির সমস্যা দুর হবে, অন্যদিকে এলাকায় কৃষির বিপ্লব ঘঠানো সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত