পত্রিকার সম্পাদকীয়ের মান

আপডেট : ০৭:৫৬ পিএম, রোববার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৯১০

ফাইল ফটো
ভাবছিলাম অনেকদিন লেখালেখিতে আর থাকবো না কারণ অনেক পড়াশুনা জমে আছে, এগুলো শেষ করতে হবে। তা ছাড়া প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চাদের জন্যও দেখছি বিশ্ব ব্যাংকের মোটা মোটা বই পড়তে হয়।
চাকুরি কালীন কখনো চাকুরী সংক্রান্ত এত মোটামোটা বই কখনো পড়ি নাই, এখন প্রাইমারীর বাচ্চাদের জন্য তা করতে হয়। সেদিন আমার এক জুনিয়র সহকর্মী কথাচ্ছলে বলেছিলেন যে তার এক আত্মীয় তাকে বলেছেন,
"আপনারা সবকিছুই করেন, শুধু প্রাইমারীর বাচ্চাদের পড়াশুনা ছাড়া। " আমি বললাম যুক্তির কথাই বটে!
তো আমার মুষ্টিমেয় পাঠকবৃন্দ ভাবতে পারেন যে , লিখতে চাইলে লিখে ফেলেন এত ভুমিকা কেন? তাছাড়া বর্তমান সময়ের উপযোগী ভ্যাকসিন এর সমস্যা, অক্সিজেন এর সমস্যা , কোভিড এর ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্ট আর লক ডাউন নিয়ে লেখেন , তাতে মার্কেট পাবেন ভালো?
উপরের সব কয়টি কথাই সত্য। একজন লেখক কখনো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন না। সমাজের সব সমস্যাই তাকে আহত করবে।
এ বিষয়েই আজকে কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। উপরের ভনিতার সাথে এ সম্পাদকীয়ের আশ্চর্য মিল রয়েছে।
বিকেলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর ১৩ব্যাচের ২৭ বছর পূর্তির ভার্চুয়াল মিটিং ছিল। মিটিংটি মুলত সৌজন্য ও কুশল বিনিময়, কোভিড কালীন কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বিষয় নিয়েই সীমিত ছিল। তাছাড়া আমি নেতৃস্থানীয় কেউ না । তাই , এক ঢিলে দুই পাখী মারার মতো মিটিংও শুনছিলাম এবং অফিসের এক জটিল হিসাব পরীক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমি জটিল মনে করলে কি হবে, হিসাবটি আমার মগজে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেলো। অগত্যা কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাটি নিয়ে ঘাটতে থাকলাম । ঘাটতে ঘাটতে নজর পড়লো সম্পাদকীয়তে।
আজকের সম্পাদকীয়ের বিষয় ছিল "আমাদের মত"। একটি লেখা যে কত উৎকৃষ্ট হতে পারে এ সম্পাদকীয়টি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
সম্পাদকীয়টি শুরু হয়েছে সদ্য প্রয়াত পশ্চিমবঙ্গের কবি শঙ্খ ঘোষ এর প্রয়ান নিয়ে। কিন্তু আলোচনায় এসে গেছে কবি বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড, গান্ধীর অনশন, পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে বামফ্রন্ট, তৃণমূল ভারতে হিন্দুত্ববাদের মরণছোবল, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জ্বলন্ত অগ্নিকাণ্ড সিঙ্গুর বিষয়াবলী, চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব আন্দোলন এবং সে সময়ের শাসক কাজীর এর প্রতি সম্মান, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রবীন্দ্রনাথ এর চিন্তাভাবনা, শান্তিনিকেতন এ কবি সম্মেলন, শঙ্খ ঘোষের কবিতা এবং রাজনৈতিক , সামাজিক সমস্যায় তাঁর ভুমিকা।
পাঠক বুঝতে পারেন এক সাংবাদিক কত উচ্চমার্গের হলে এ রকম বহুমাত্রিক সর্বোৎকৃষ্ট একটি সম্পাদকীয় লিখতে পারেন, যেখানে সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি, দর্শন, সামাজিক বিষয়াদি এক হয়ে গেছে।
সাংবাদিকতা একটি উৎকৃষ্ট পেশা। এ পেশার উন্নয়নে বহুমাত্রিক পড়াশুনা করতে হয়। কিন্তু হালের সাংবাদিক দের অবস্থা দেখলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়।
আমার ছাত্রজীবনে ঢাকার ইত্তেফাক এবং সংবাদ দুটোই নিত্য পাঠ্য ছিল। পত্রিকা দুটোর মান বিশেষত ইত্তেফাকের উপসম্পাদকীয় এবং সংবাদের সাহিত্য পাতা ছিল অতুলনীয়। ইত্তেফাক যদিও ধর্মীয় মৌলবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিল এবং অপর পক্ষে সংবাদ মস্কোভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক ধারণায় বিশ্বাসী ছিল তদুপরিও লেখার মানের বিষয়ে তারা অপ্রতিরোধ্য ছিল। ঐ সময়ের ইত্তেফাকের কিছু সাংবাদিকের সাথে আমার উঠা বসা ছিল। তাদের জ্ঞানের পরিধি দেখে আমি অভিভূত হয়ে পড়তাম।
এখন সে সাংবাদিকতা কোথায়? গুরুজনেরা আসলে ঠিকই বলে , "যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ।"
দিলীপ কুমার বনিক

যুগ্ম সচিব
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত