ভিক্ষা বা করুণা নয়, জীবনের সাথে সংগ্রাম করতে চাই

জীবন সংগ্রামে প্রতিবন্ধী তুহিন

জিএম মিজানুর রহমান, চুলকাঠি

আপডেট : ০৯:০৭ এএম, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৭ | ১১৫৫

কাজের ফাঁকে প্রতিবন্ধী তুহিন

ভিক্ষা নয়, করুণা নয়। যুদ্ধ করে বাঁচতে চায় তুহিন। তুহিনের পরিচয় সে একজন মোটর সাইকেল গ্যারেজের সহযোগী মিস্ত্রী। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। এক পা নেই। কাঠের লাঠির উপর ভর করে এক পায়ে চলতে হয় তাকে। তার দুই হাতে আঙ্গুল রয়েছে ৬ টি। ডান হাতে বুড়ো আঙ্গুল ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল ছাড়া বাকি গুলি নাই, আর বাম হাতে রয়েছে ৪ টি আঙ্গুল। ডান হাত দিয়ে ভর করে থাকতে পারে এবং হালকা করে দুই আঙ্গুল দিয়ে কিছু ধরে রাখতে পারে। বাম হাতের ৪ আঙ্গুল দিয়ে তাকে অনেক কাজ করতে হয়। এমনকি ভাত খাবার কাজটিও তাকে বাম হাত দিয়ে করতে হয়।

বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মাদারতলা গ্রামে (তার দাদা নুর মোহাম্মদ শেখ) তাদের আদি গ্রামের বাড়ি হলেও বর্তমান ঠিকানা মংলা উপজেলায়। উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের দিগরাজ ( বালুর মাঠ) গ্রামের কামরুল শেখের ছেলে এই তুহিন শেখ। বয়স তার ২৫। ৩ ভাই বোনের মধ্যে বড় সে। বাবা কামরুল শেখ একজন দিন মজুর। মংলার একটি হোটেলের কারিগর হিসাবে দিন মজুরীর কাজ করে তার বাবা। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী এই তুহিন। বাবা-মার কোল থেকে বেরিয়ে যখন তার খেলাধুলা ও পড়াশোনা করার কথা। তখন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে অন্যের দোকানে।

অন্যের ঘা-গুতা খেয়ে চলতে থাকে তার জীবন। এক পর্যায়ে তার কাকা মোটর সাইকেল মিস্ত্রী আলামিন শেখ তাকে নিয়ে গ্যারেজে রাখে। চা আনা , এটি ওটি এগিয়ে দেয়া থেকে শুরু হয় তার শিক্ষানবীশ। এভাবে ১০/১২ বছর বয়সে একজন সহযোগী মিস্ত্রী হয়ে ওঠে। মোটর সাইকেলের ছোট খাট কাজ শিখে ফেলে। তখন সে তার কাজের সন্ধানে অন্য এক গ্যারেজে ঢুকে পড়ে। পেটে ভাতে তাকে কাজ করতে হয়। ২০১৩ সালে চুলকাঠি বাজারের মোটর সাইকেল মেকার শওকাত হাওলাদারের কাছে এসে পড়ে। শওকাত ঠাই দেয় তাকে।

খাওয়া পরা ছাড়া পকেট খরচ দিয়ে রেখেছে তাকে। শওকাত হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ২০১৩ সালে এসে তুহিন তার কাছে সাহায্য চাইলে তার প্রতি করুণা হয়। সে যেভাবে এখানে ওখানে হোচট খেয়ে চলছে, তাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারে, তার ভাল লাগবে ভেবে তাকে ঠাই দেয়। এভাবে গ্যারেজের সহযোগী হিসাবে কাজে লাগিয়ে দেন। খাওয়া-পরা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সুবিধা তিনি দেন।

এ প্রসঙ্গে তুহিন শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, প্রতিবন্ধী হওয়া কতোটা যন্ত্রণার সেটা অন্য কেহ বুঝবে না। তার গ্যারেজ মালিক শওকাত হাওলাদার তাকে খুব স্নেহ করেন। খাওয়া-পরা ছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করে। সে প্রতিবন্ধী হিসাবে কারো কাছে ভিক্ষা বা করুণার পাত্র হয়ে বাচতে চায়না। তাই স্বাবলম্বী হিসাবে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত